
চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে
আমরা ভেবে করবো কি
ওরে ঝিয়ের পেটে মায়ের জন্ম
তোমরা তাদের বলবে কি
ছয় মাসের এক কন্যা ছিল
নয় মাসে তার গর্ভ হলো
আবার এগারো মাসে তিনটি সন্তান
কোনটা করবে ফকিরী ফকিরী
ঘর আছে তার দুয়ার নাই
লোক আছে তার বাক্য নাই
কেবা তাহার আহার যোগায়
কে দেয় সন্ধা বাতি সন্ধ্যা বাতি
লালন ফকির ভেবে বলে
মায়ে ছুইলে পুত্র মরে
আরে এই কথার মান না জানিলে
হবে না তার ফকিরী ফকিরী।।
চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে
এখন দেখা যাক এই গানের মাধ্যমে লালন কোন তথ্য আমাদের কাছে পৌচ্ছে দিতে চেয়ে ছিলেনঃ
Uterus, a hollow organ inside a women’s body
where a baby grow up after fertile egg and sperm matches
চাঁদের মতো গোলাকার দেখতে মাতৃগর্ভ
আর শিশুকে চাঁদের সাথে তুলনা করা হয়
এক চাঁদকে তুলনা করা হয়েছে মাতৃগর্ভের সাথে
আরেক চাঁদ হলো ভ্রুন
ছয়মাসের ভেতর এই ভ্রুনে জীবনের সঞ্চার হয়
নয়মাসে এই ভ্রুন পরিপুর্ন শিশু হয়ে
পৃথিবীতে আসার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়
আর এগারো মাসে এই শিশু হাটতে শেখে
(আমার শিশুরা ৯ মাসেই হাটতে শুরু করে – স্টান্ডার্ড
সময় ১১ মাস)
হাটার আগে শিশু হামা দিয়ে চিনে নেয় তার পরিসর
কতদূরে সে যেতে পারে
ভ্রুনে শিশু থাকাকালিন এই মায়ের ভ্রুন এক মানবের জন্মের
প্রতিশ্রুতি দেয়
মানুষ আছে বাক্য নাই – শিশু মানব
কিন্তু কথা বলতে পারেনা মাতৃগর্ভে
ঘর আছে দুয়ার নাই – ভ্রুনে থাকতে পারে কিন্তু বেরুতে
পারেনা সময় না হলে। এক চক্রের ভেতর দিয়ে যায় নয় মাস। সেই চক্রের বিভিন্ন সময়ে
শিশুর বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ একটু একটু করে গড়ে উঠে। অন্ধকারে থাকে শিশু কিন্তু
মায়ের নাড়ির সংযোগ থাকে শিশুর নাড়ির সাথে। সেইভাবেই সে আহার করে।
কেবা তাহার আহার যোগায় কেবা দেয় সন্ধ্যাবাতি
৯ * ৩ = ২৭
৬ * ৩ = ১৮
২৭ – ১৮ = ৯
লালন ফকির ভেবে বলে
মায়ে ছুইলে পুত্র মরে
আরে এই কথার মান না জানিলে
হবে না তার ফকিরী
- [মানব সমাজে এক
বহুল প্রচলিত প্রথা আছে। বিবাহ করে ঘরে
স্ত্রী নিয়ে আসা ঘরের কাজের জন্য, ক্ষেতের কাছের
জন্য, গরুর দেখাশোনার জন্য আর সন্তান উৎপাদন করার জন্য। স্ত্রী হলো অনেকটা হালের
বলদের মত - উৎপাদনের একটি উপাদান।]
এই উপাদান যখন
গর্ভবতী হয় আ...র পুত্রসন্তান লাভ করে আর যদি এই পুত্র সন্তান
ভূমিষ্ট হবার সাথে সাথে মারা যায়। তখন এই স্ত্রী বা ছেলের মা’কে সবাই দোষোরোপ
করে “পুতখেকো” বলে।
অথচ সেই চাঁদের
গায়ে যে চাঁদ লেগেছিল সেই চাঁদ লাগাতে - না চাঁদের বাবার,
না চাঁদের মায়ের,
কারুর কোন অবদান
বা করার কিছু ছিলনা। জৈবিক চাহিদা মেটানো আর বাচ্চা বানানো এই তো মোদ্দা কথা।
তবু প্রাকৃতিক
নিয়মে মা যখন গর্ভবতী হন তখন তার মধ্যে এক ধরনের ল্যাবন্য দেখা দেয় । মা হবার
আনন্দে। পরিপূর্নতা আসে। আর সেই জন্যেই এই নয় মাসে মা
হাজারও কষ্ট সহ্য
করেন। আর জন্মের সাথে সাথে সেই সন্তানের মৃত্যুতে সেই চাঁদ বা গর্ভ খালি হয়ে যায়।
চাঁদ বিদায় নিয়ে চলে যায় আরেক চাঁদের কাছ থেকে তারপর পৃথিবীর আলো দেখতে না দেখতেই
সে চিরবিদায় নিলে দোষ হয় মায়ের – ছেলে খাবার
অপরাধে।
কেউ দেখেনা,জানেনা,
বোঝেনা সেই নয়
মাসের ব্যাথা, কথা, আশা, নাড়ীর যোগাযোগ। সন্তান হন্তার অপরাধবোধ আর সন্তানের জীবন যা বাঁচাবার
ক্ষমতা না ছিল মায়ের না, ছিল বাবার। না
ছিল প্রতিবেশীর, না ছিল সেইসব লোকের যারা একজন মা’কে–
“ছেলেখেকো”
বলে দোষারোপ করে –
তবু যেন এটা একটা
প্রথা – সন্তানের জন্ম যে দেয় – যদিও সন্তানের
জীবন সে দেয়নি – তবু সেই মা'কেই দায়ী করা হয় ভূমিষ্ট শিশুর তৎক্ষানিক মৃত্যুতে।
এই হলো ...।
মায়ে ছুইলে পুত্র
মরে
আরে এই কথার মান
না জানিলে
হবে না তার ফকিরী
.........শেষ কথা।।