Sunday, December 9, 2012

কাপুরুষ

কারুকে দেখিনি মাথা তুলে দাঁড়াতে
সবগুলো মাথা
হয় নত নয় মৃত
কেউ সাহস করেনি মাথা উঁচু করার
যারা করেছিল তারা মৃত
বেয়োনেডের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত
যারা নত করেছিল
তারা কাজ করে প্রহরীর
ক্ষত বিক্ষত করে দেয়
কেউ মাথা তুলে দাড়ালেই
...
তাই নত করে রাখে মাথা
সবার উপরে থাকেন ইশ্বর
ঘাড়ের উপরে ফ্যালেন দীর্ঘশ্বাস
মগজের ভেতর
সেঁধিয়ে রেখেছেন বিষাক্ত বাতাস
ভয়গুলোকে মোড়কে করে
ঠেসে ধরেছেন অস্থিমজ্জ্বাতে
কেউ মাথা উঁচু করে না আর
সবার মাথা
হয় নত নয় মৃত

ভাবছিনা আর কিছু

ভাবছিনা আর কিছু
মগজের এখন বিশ্রামের সময়
দেখছিনা আর কিছু
চোখের এখন ঘুমের সময়
শুনতে পাইনি অনেক কিছুই
এখন উল্লাসের সময়
আক্রোশ আর চিৎকারের
ক্রোধ, ইর্ষা আর কটু বাক্যেরা
স্বাধীনতা ঘোষনা করেছে
রাজ্যপাল হীনমন্যতা
শুনাতে পছন্দ
শুনতে অপছন্দ

অহেতুক

রোদ আর বৃষ্টির মত
জীবন এই আসে এই যায়
এই তো সেদিন হামাগুড়ি দিয়ে
দাঁড়াতে না দাড়াতেই
চলে যাবার সময় হলো

অন্য কোন গ্রহে
অন্য কিছু করতে শুরু
পুনরায়
অহেতুক

ফিরে আসে বারে বারে

সময় ছিলনা ফিরে দেখার
আকাশ মেঘলা ছিল
দরকার ছিলনা ভেবে দেখার
ভুলগুলো
সাজানো থাকে মেঘের আড়ালে
নিয়ম করে এক ফাঁকে ঝরে যায়
নিয়ম মত স্তরে স্তরে
আবার ফিরে যায়
মেঘের আড়ালে

চক্র

ভুলগুলো এখন সীমার বাইরে
নষ্টরা অষ্টপ্রহর কৌতুক করে
গাট্টা মারে মাথার ভেতর
ভুল করে হয়ে যায় নেশার মতন
ভুলগুলো ছায়ার মত অনুসরন করে
কায়াহীন মায়া
যদি এমন হতো তাহলে কেমন হতো
সত্যরা সবাই হাসে
চড়াই উৎরাই
রোদ ঝড় বৃষ্টিতে
জ্বলে যায়, উড়ে যায়, ধুয়ে যায়
স্বপ্নের চূড়া

অন্য অন্ধ

চোখে না দেখলেই কি শুধু অন্ধ হয়?
নিজের দোষগুলোকে
নানাবিধ অজুহাতের মোড়কে ঢেকে
গুনাগুনে পরিবর্তিত নষ্ট প্রচেষ্টাও অন্ধত্ব
সবাই অসম্পূর্ন
সবাই চলে যায়
বাকী রেখে কাজকাম
জীবনের শুরু থেকে শেষ
অহংকারের অন্ধকারে
কেটে যায় বেশ
অজুহাত শুধু অজুহাত
অতীত আছে শুধু
বর্তমানে পা রাখা দুই নৌকাতে
ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
অন্ধ মন হাতড়ে ফেরে
কোনটা শুধু আমার
আমি আর আমার কারবার
অন্ধকারে এগুতে থাকি
আমি আর আমাকে নিয়ে

Tuesday, September 18, 2012

শেকল শক্তি

স্বাধীনতার চেয়ে শেকলে শক্তি বেশী
যখন স্বাধীন থাকি
তখন ব্যস্ত থাকি অন্যকে শেকলে বাঁধতে
শেকলে অনুগত করে
যখন স্বাধীন থাকি ক্রুদ্ধ হই নিজের জন্য অনুগত হতে
শেকলে নিরুপায় করে
যখন উপায় থাকে অন্যকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করতে ব্যস্ত থাকি
অথচ কথা ছিল
শেকল থেকে দূরে থাকবো
শেকল থেকে দূরে রাখবো
.নিজেকে ও অন্যকে
কারাগারের চার দেওয়ালের ভেতরে ছিল, আছে এবং থাকবে
আমার অবস্থান আজীবন
আমি বুঝিনি
মনকে মুক্ত করতে হবে সব চাইতে আগে
তারপর শরীরকে

Sunday, September 16, 2012

ভাল আছি

আমরা সবাই ভাল আছি
দুঃখ ঢেকে রাখি
তরল স্বচ্ছ চোখের জলের নীচে
আমরা হেসে হেসে মিথ্যা বলি
ভাল থাকা জিতে যাওয়া
ছিদ্র দিয়ে মরুভুমি দেখা গেলে
হেরে গেলে
পায়ের রগ ছিড়ে যায়
চামড়ার ভেতরে
টেনে হেচড়ে চলছে জীবন

অপেক্ষা

আবার বৃষ্টি হলে হাঁটুজলে ডুবে যাবো
আবার মেঘ হলে বুক ভাসিয়ে বসে রইবো
আবার ভাটা এলে চাতকীর মতো জল চাইবো
আবার সন্ধ্যা এলে বিষন্ন বদনে অপেক্ষা করবো
একাকী মৃত্যুর

নিরুপায়

কোন কথা পেটে রাখা দায়
ভাবছি ওদের আর মাটির নীচে নেবোনা
ওখানে লেখার কাগজ নেই
বাঁশঝাড় সব কেটে কুটে একসার
রেখে যাবো পাখীদের ঠোটে
ওদের জীবন সংক্ষিপ্ত
তোমাকে বলে যাবো
যদি না বুঝে মিলিয়ে ফ্যালো ঘোলা জলে
সেখানে ঘুর্নিপাকে অন্য কথা হয়ে যাবে
যার সবকিছুই অজানা
সুন্দর মলাটের নীচে
দুর্বোধ্য পান্ডুলিপির মত

ফাঁকি

এক ছায়া অনুসরন করি রাতদিন
না জেনেই সত্য মিথ্যা
ছায়ার পেছনে
এক বিশ্বাস গেঁথে রাখি মনের গভীরে
স্বাদ না পেয়েই
সুধা বা বিষের
লেগে থাকে অঙ্গে অঙ্গে অংশীদার
বিচ্ছিন্ন থেকেও চিরকাল
সাথে তো যায়না কোন কিছুই
তবু এ্যাত ভয় কেনো হারাবার ?

Thursday, September 13, 2012

অপরিবর্তিত

এই তো আজই এলাম
শানবাঁধানো দীঘির জলে মুখ দেখে
চুলে কাঁকুই দিলাম
এই তো ঢেউ খেলানো চুলে ছায়া
ঢেউয়ে ঢেউয়ে ছুঁয়ে গেলো
সেই প্রান্তে
যে আমার মুখ দেখেছিলো জলে
এই তো সেখানে এক পানকৌড়ি ভাসছে
বিষন্ন একাকী
আজ ভেঙ্গে গেছে দীঘির পাঁড়
আজ জমেছে শতাব্দীর জঞ্জাল
দীর্ঘদিনের অবহেলার ফসল
আজ দীঘিতে কলস ভাসে একাকী
গলায় ফাঁসানো দড়ি গলে গেছে পচে গেছে
মিশে গেছে দীঘির জলে
শুধু ঢেউ খেলানো চুলের ছায়া ভেসে যায়
ঢেউয়ে ঢেউয়ে

অকেজো

বেশ তো কেটে যাচ্ছে
মধ্যবিত্তের ঘষামাজা
পাছে লোকে কিছু বলে
ফিন ফিনে পাঞ্জাবীতে আধো আলো
স্বল্পভাষী মার্কসবাদী
ধরি মাছ না ছুঁয়ে পানি
এই তো কেটে গেলো জাবর কেটে
পঞ্চাশের চৌকাঠে পা রেখে ঠিক মাঝখানে
না পারি নীচে না পারি উপরে
যেতে গেলে আটকে থাকে

বোতামে লাল ফিতে
এইখানে আটকে থাকি
দুর্বোধ্য যুক্তি তর্কের গলিঘুজিতে
আষ্টেপিষ্টে চোখ রেখে কড়িবর্গাতে
মধ্যবিত্তের স্বল্পভাষী রেলগাড়ী চড়ে
ঊচ্ছিষ্ট নামে নীচে
হাড্ডিসার ধুঁক পুক কলিজাতে
মার্কসবাদ আটকে থাকে
ঠিক মাঝখানে

গেড়ো


এক বাক্স স্বপ্ন
এক নিমেষে উধাও হবে
কি আশ্চর্য !!
সেই চোখ খুলতেই কাঁচা রোদ মাখা সকাল
এখন দূষিত
স্বপ্ন এখন সুপার মার্কেটের খাটালে অপেক্ষারত
রঙ্গ মেখে সঙ সেজে
কৃত্রিম হাসিতেই জগত গেছে ভুলে
সংকোচে বিহ্বল
কেন নেই আগের মত

কোন অপেক্ষা
হাসি
এই বিনিময় প্রথার শুরু হয়েছে সেই কবে
অনাদিকাল থেকে
কেনো বুঝিনি আমি ?
অকৃত্রিম হাসি আর ভালবাসা কেনো তবু
ঝুলে থাকে অকেজো সিকির মত ?
এ কেমন গেড়ো ?
এলোমেলো !!

ভয়


Friday, September 7, 2012

আড়াল

সোজা কথাকে জটিল করে বলি
এই তো কালক্ষেপন করি
আমি যা করতে চাই
তা জানাতে চাইনা
শুধু যা করিনা তাই বলি
শুনতে এক বুঝতে আরেক
আর করতে গেলেই বিপাক
এমনিতে সোজা পথে বেশী ভীর
আমি নতুন পথ বানিয়ে নিই
একাকী হাটবো তাই
এমনিতে এই পৃথিবী জনাকীর্ণ
ভীরের নীচে হারিয়ে যাওয়া কঠিন
সবার চোখ থাকে সবার চোখে
একাকী হারিয়ে যাওয়া সহজ
মনের সুন্দর গ্রহ নক্ষত্রের সাথে
বসবাস সহজ
বুঝতে দিতে চাইনা মনের গহিনে
কে কে আছে
সঙ্গি সাথী স্বপ্ন সম্ভার

পাশবিকতাতে আনন্দ

নিজেকে পরখ করি বারে বারে
কত রুপ রঙে ঢঙ্গে সাজিয়ে
নিজেকে খুলে ধরি বারে বারে
কত কথা কত গান বাজিয়ে
তবু কেউ জানেনি আমি কে
এই না জানা এক সত্য
আমরা জানাতে চাই শুধু
আমরা জানতে চাইনা কিছু
সেজন্যেই এ্যাত দ্বন্দ এ্যাত বিবাদ বিসংবাদ
আমরা বিবাদ ভালবাসি
সংঘাতে অনুভব করি
আদিম আনন্দ

শব্দ গুলো বুকের ভেতরে

কতকাল হলো পরিচিত উঠনে পা রাখিনি
আমার শৈশবের নদীনালার উপরে দালানকোঠা
হারিয়ে যাবার সখের বশে
হারিয়ে ফেলেছি কৈশরের বর্ষাতে হাটুজলে তেতোপুটি
এখনো অভিমান করি
চলে যাবো সব ছেড়ে এই বলে
যখন সবাই চলে গেছে আমারেই ছেড়ে
যৌবনও চলে গেছে
শত কোটি বছর অপেক্ষায় রেখে
শর্তহীন প্রেমিকের


আয়শা মেহের
হাতের সব রেখা স্পষ্ট পড়েছি
কোথাও কোন ভুল নেই
বদলেছে মোড়ক শুধু
নীচে সেই পুরাতন কর্দমাক্ত কঙ্কাল রেখেছে ঢেকে
পেচকের চোখকে ধোঁকা দেবে বলে

Saturday, August 18, 2012

যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা

সব কথা শেষ হলে
হুল ফুটিয়ে গেলে
প্রতিটি কথার শেষে
কি সুক্ষভাবে
সেইসব এলো বেদনা থেকে
প্রত্যাশা না মেটার হতাশা থেকে
অপারগতার গ্লানি থেকে
সেইসব কথা শেষে  
ব্যাথা এলো শুধু
বোধের জানালাবিহিন দেওয়ালে মাথা খুটে
ভালবাসা
শুধু ভাল চাওয়া
প্রতিহিংসা যুদ্ধ প্রতিযোগিতার
অবকাশে
কেড়ে নেবার লালসা মাকড়শার  জালে অবরোধ
জয়ের বাসনা
কথা বা সম্পদ বা সম্রাজ্য বা নিয়ন্ত্রন
কাকে কোন নাম দেবে দাও
কি এসে যায়!!
সব কথা শেষে
রেশ থেকে যায় সেই পুরানা সুর
দখল, ভোগ, ঢেঁকুর, পরিত্যাক্ত আবর্জনা
স্পর্শ করেনা ভালবাসা
পৌরুষ ছাড়ে হুঙ্কার
যেখানে নিয়ন্ত্রন করার উপায় নাই
সেখানে মান সন্মান নাই
সেলামী রেখে যাও পৌরুষের কাছে
নিয়ন্ত্রনের চাবিকাঠি
অবরোধ করে রাখে দিনরাত
ভ্রমরের হৃদয়  

লুকানো সত্য

বাকলের মত
শুখিয়ে ঝরে যাওয়া শৈশবে
যেমন ছিল
তেমনি এখনও আছে
রহস্য
না বলা শব্দ
নির্লজ্ব নাম নিয়েও
অনেক লজ্বাতে বুক ফাটে
তবু মুখে ফোটে না
সত্য খইয়ের মতন
অপেক্ষা করে পুরাতন খাটালে
সাথে যাবে কবরে  নিঃশব্দে


পরিবর্তিত

এক তরফা ঢালাও নাম দিওনা
অনুভূতির
এক এক সময় এক এক রকম
এক এক সময় এক এক কারন
এক এক সময় এক এক ধরন
দুঃখগুলো শেষমেশ একসাথে মিশে গেলেও
সব নীল রঙ এক নয়
আকাশের সব রঙ ভিন্ন ভিন্ন
কারু সাথে কারু মিল নেই
হাতের রেখার মত
অনুভূতিগুলো তেমনি
এক এক বেদনা এক এক রকম
একবিন্দু সুখের মুখ দেখতে
আকাশ আর মাটির সমান ব্যাথার সাগর পেরুতে হয়
তবু তাকে ধরে রাখা যায়না এক মুহূর্ত
উধাও হয় এক নিমেষেই
খোঁজখবর না দিয়েই
ঠিকানা না রেখেই
কত শত মিনতি না শুনেই
এলোমেলো বাতাসে শূন্যে ভাসে
টুকরো কথা
ভালবাসার শব্দ
তেতো ইতিহাস
নিমের রসে মড়কের ওষুধ
এক এক অনুভূতি এক এক রকম
মিল নেই কারু সাথে কারুর

অবরোধ

ওরা থাকবে চিরকাল
জীবনের সাথে
শ্বাসরোধ করে
স্বপ্নের সাথে
না মিটলে স্বাধ কোনদিন আর
 সান্তনা দেবে
একা একা অশ্রুকে আলিঙ্গন করে
ঠেকে গেলে চিবুক থেকে কন্ঠাতে
শুকিয়ে দেবে
অশ্রুর দাগ
কিছু কিছু বেদনা সাথে রাখা ভাল
সব সুখ রোদে শুখিয়ে ঝেড়ে মুছে দ্যাখো
বেদনা লেগে থাকে থাক
কিছু কিছু ভুল সাথে রাখা ভাল
কিছু কিছু পুরানা অভ্যাস
ভুল ভুলে গেলে
বৃথা হবে শুধরানোর সব কৌশল


ফেরারি

ভুল করেও তাকিয়ে দেখোনা
পেছনে
নির্লিপ্ত চোখ অপেক্ষামান
ফেলে আসা ভুল
এবড়ো খেবড়ো গলিঘুজিতে
জীবনের আটপৌড়ে সময়ে
গাঁথা আছে বিনিসুতায়
টেনে ধরতে পারে হাত
আস্তিনে আঁটকে গেলে পেরেক
গাট্টিবোচকা সব খুলে দেখো
কিছু কিছু ভুল এসে গেছে
ভুল করে সাথে
কিছু কিছু অভ্যাস থেকে গেছে
চামড়ার নীচে চুপচাপ
হুইপোকার মত ঢিবী ঢিবী করে
বুকের বিবিধ অনুভুতিতে মিশে

তলানী

এখানে হাসি আছে
বিশুদ্ধ
এখানে কান্না আছে
অনাবিল শান্তির মাঝে
খুলে রাখে বুকের দেওয়াল
অমৃত ভেবে বিষ পানে
ব্যস্ত সবাই
এখানে নদী আছে
বিষাক্ত জলে লাশ ভাসে
শিশুদের 
মায়ের শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন
হয়ে
ক্লান্ত হয়ে যায় জলজ জানোয়ার
এইসব নতুন খাদ্যে
আগের মতন
নেই সেই স্বাদ

ভ্রমন

মাঝে মাঝে ফিরে যেতে হয়
সেই মৃত্যুকূপে
নিজের অজান্তে
মৃত ইচ্ছা
মৃত স্বাধ
মৃত সম্ভাবনা
নেড়ে চেড়ে দেখি লাশ
মৃত্যুকূপের চারিপাশে
সাজানো জীবনের ইতিহাস
লাশ হেঁটে চলে যায়
অভিনয় করে
জীবিতের ভূমিকায়
নিখুঁত
লাশ হাসে একাকী নিঃশব্দ হতাশায়
আলগা হয়ে ভাসে
ছড়ানো ছিটানো
উত্তেজিত দুপুর
উদাস সন্ধা আর ব্যর্থ রাত্রির
চারিপাশে লাশ অভিনয় করে
জীবিতের ভূমিকায়
নিখুঁত

Monday, August 6, 2012

ততক্ষন

বুকের ভেতরে এখন আর কোন হট্টগোল নেই
সবকিছু চুপচাপ
হাটবাজার বন্ধ
কারফিউ লেগেছে বুকের শহরে
এখন শুধু চুপচাপ
নিঃশব্দে শিরাউপশিরা দিয়ে রক্ত চলাচল করে
থেমে যায় এক এক সময় সেখানে
যেখানে স্থবিরতা
পোকা লাগা গোলাপ মরখুন্ডে ফুল প্রসব করে
তবু বেঁচে থাকে খর্বকায়
শেকরে প্রান থাকা অবধি

Sunday, July 1, 2012

একটু সময়

 
রোজ রোজ এসে দাঁড়িয়ে থাকি
আলো আঁধারে প্রতিবিম্ব খুঁজি
সবগুলো পথে অলিতেগলিতে
অনাড়ম্বর জীবনে এক চিলতে রোদ্দুর খুঁজি
স্যাতস্যাতে ভিজে গাছের ছ্যাদলাতে
গুড়ি গুড়ি পোকামাকড়ের আসা যাওয়া
প্রানের স্পন্দন সবখানে
জানিনা কোন প্রত্যাশায়
... যেমন তেমন এখানে ওখানে
সবখানে সবাই তৈরি
পুরা করতে জীবনচক্র
কেনো অযথা মনে হয় তবু
বেঁচে থাকা
এসে দাঁড়িয়ে থাকি রোজ রোজ
এগিয়ে নেবো কিছুটা পথ
নীল, সবুজ, আর লাল
সবগুলো সময় এসে দাঁড়িয়ে থাকি
পরিপূর্ন বলে কিছু নেই
শুধু আছে গতি, শব্দ, পথচলা

Saturday, June 30, 2012

দৃশ্য

এলোমেলো বাতাসে
জানালার পর্দা সরে গেলে
দেখা যায় ঘরের আসবাব
রক্তের চাপ হ্রাসবৃদ্ধি পরিমাপের যন্ত্র
শৈশব, কৈশর, তারুন্যে কৃত অপরাধের
বৃদ্ধ খতিয়ান লুটোপুটি খায় মেঝেতে
ধূলিধূসরিত জাজিমের নীচে
জমাট বাধা রক্ত তোষকের কোনে
একপাশে কোলবালিশে শুখিয়ে থাকা অভিমান
ক্লেদাক্ত পাঞ্জাবীর আস্তিনে ক্রোধ
উড়ুতে কালশিটে
প্রতারণার ঢাকনি উদম
খোলা মুখ থেকে লালা
কাম ক্রোধ পরিতৃপ্ত নাশিকাধবনি
এলোমেলো বাতাসে এইসব ভাসে

Friday, June 29, 2012

অবশিষ্ট



সময় মাঝে মাঝে বৈরী হয়
বদল করেনা কিছুই
থাকার উপায় নেই
তাই চলে যায়
ভাটির টানে জল শুখালে
পেছনে রেখে যায় কঙ্কাল
ব্যর্থতা, অকেজো স্মৃতি
আর চিনচিনে ব্যাথা
শিরাউপশিরা ছিড়ে রেখে যায়
ভাঙা আরশীতে জীর্ণ
মুখ, ক্লান্ত চুল, অবশ হাত
পরম যত্নে লালিত
স্বপ্ন সাথ ছেড়ে চলে যায়
আগন্তকের হাত ধরে

Wednesday, June 27, 2012


পূর্ব বাংলার মানুষের মতই রোহিঙ্গা মুসলমানেরা জ্বলছে জনম জনম ধরে।
পলাশীর প্রান্তরের কথা মনে পড়ে গেলো ।
এইভাবেই কিছু বেইমানের জন্য প্রান দিতে হয় বহু নিরীহ মানুষের
১৯৪৭ এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিলোনা
সেই সময়ের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছিলো উপমহাদেশের মহান মীরজাফরদের সুচিন্তিত ও সুপরিকল্পিত হত্যাকান্ড।
১৯৪৭ সালে যেসব মুসলমানরা রক্তে ভেসে ভারত থেকে পাকিস্তানে আসে
১৯৭১ সালে মুসলমান সৈন্যদের তাড়া খেয়ে সেইসব মুসলমানরাই আবার ভারতে যেয়ে আশ্রয় নেয়
রোহিঙ্গা মুসলমানেরা ঠিক সেভাবেই তাড়া খেয়ে ফিরছে এই দেশ থেকে সেই দেশে
রোহিঙ্গা গনহত্যা ব্যাপক আকার ধারন করে ১৯৪২ সালে
বৃটিশ আদমশুমাড়ি অনুসারে ১৯১১ সালে বার্মাতে মুসলমানের সংখ্যা ছিলো ১৭৮,৬৪৭।  ১৫শত ও ১৮ শত খ্রিষ্টাব্দে ব্যপকহারে বৌদ্ধরা মুসলিম ধর্ম গ্রহন করে। 
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আনুমানিক ৫০০,০০০ ভারত থেকে পালিয়ে যেয়ে বার্মাতে আশ্রয় নেয়।

১৯৪২ সালে বার্মা ইনডিপেন্ডেস আর্মীর নেতৃত্ব এক মুসলমান নিধন কর্মসূচী গ্রহন করা হয়। এই কর্মসূচির আওতায় সেই সময় ১০০,০০০ নিরীহ রোহিঙ্গা মুসলমানকে হত্যা করা হয় ।

সেই বছরেই ৮০,০০০ রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে যেয়ে আশ্রয় নেয় ।
সেই বছরে ২৯৪টি মুসলিম গ্রাম ধ্বংস করা হয়। অগ্নিসংযোগ, লুন্ঠন, ধর্ষন আর হত্যার মধ্যে দিয়ে এই ইনডিপেন্ডন্ট লিবারেশন আর্মী তাদের মুসলিম নিধন কর্মসূচী চালিয়ে যায়।

১৯৬৪ সালে রেভলুশন কাউন্সিল রহিঙ্গাদের সব ধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও সংগঠনগুলোকে বাতিল ঘোষনা করে
এইসময় রেডিওতে রোহিঙ্গা ভাষায় অনুষ্টান প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়।  ১৯৪৮ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত মোট ২০টি ব্যাপক হারে রোহিঙ্গা মুসলিম নিধন অভিযান পরিচালনা করা হয় রোহিঙ্গা মুসলিমদেরকে বার্মা থেকে সম্পুর্ন ভাবে নিশ্চিহ্ন করা দেবার জন্য।

বাংলাদেশে শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমান বসবাস করে আর সেই কারনেই রোহিঙ্গা মুসলমানেরা বার বার বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। ১৯৯২ সালে ২২৯,৮৭৭ রহিঙ্গা মুসলমানকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া হয়। এখন ২০১২ সাল। বার্মাতে রোহিঙ্গা গনহত্যা চলছে। সারা বিশ্ব চুপচাপ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে
সারা বিশ্বের মতই বাংলাদেশও এখন রোহিঙ্গা মুসলমান গনহত্যার নীরব দর্শক। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকার সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। বাঁচার শেষ আকুতি নিয়ে রহিঙ্গা মুসলিম আবালবৃদ্ধবনিতা অপেক্ষা করছে কবে বাংলাদেশের মুসলিম ভাইবোনের হাত প্রসারিত করে দেবে বলে । 

বিবিধ

সব কথা বলা যায়
যদিও সব কথা সবাই বোঝেনা
সব কিছু দেখা যায়
শুধু মন কেউ দ্যাখেনা
মনের কথা চোখে লেখা থাকে
চোখের ভাষা সবাই পড়তে জানেনা
অনেকেই পড়তে চায়না
প্রয়োজনীয় নয় তাই
লাভক্ষতির অংক শুধু যে ব্যবসায়ীরাই করে সেটা ঠিক নয়
যারা বাণিজ্য সম্পর্কে অজ্ঞ
তারাসহ যারা জ্ঞাত তারা সবাই
লাভক্ষতির অংক কষে ক্রমাগত
নিজের অজান্তে
নিজেকে ভালবেসে

Wednesday, June 20, 2012

রোহিঙ্গা মুসলিম গনহত্যা ১৯৪২-২০১২

আল্লাহকে বিশ্বাস করে দেখেছি
রক্তে ভিজে দেহ জমে গেলে
শরির টেনে উঠাতে পারিনি
পাথরের মাঝখানে আটকে ছিলো
সমস্ত পৃথিবী
আল্লাহকে খুঁজেছি
জন্মের শোধ দিয়েছি
টিকে থাকার টিকেটের অগ্নিমূল্য
দুহাত পেতেছি
ভিক্ষার – আল্লাহ বা পুঁজিপতি বা তাঁদের পদলেহনকারী ভৃত্যেরা
নৌকাতে, ক্যাম্পের ভ্যাপসা কোনে বা খোলা আকাশের নীচে
বা বেশ্যাপল্লীতে – তবু বেঁচে থাকতে চাই
দুহাত পেতেছি
ভিক্ষার
 

রোহিঙ্গা মুসলিম গনহত্যা ১৯৪২-২০১২


এ কেমন সৃষ্টিছাড়া নিয়ম
শুধু মৃত্যুর নাম লেখে প্রতিটি জীবনে
শুরু হবার আগেই
মাথায় কাফন বেঁধে শিশুরা সব জন্ম নেয়
এক তিমিরে
... সেখানে কেউ জন্মতিথি উৎযাপন করেনা
শুধু লাশ দাফনের আয়োজনে ব্যস্ত থাকে
শিশুরা কৈশর দ্যাখেনা
কিশোরেরা তারুন্য স্পর্শ করেনা
তরুনেরা কবরে শুয়ে বৃদ্ধ হয়
ঘরগুলো সব গোড়ের উপরে
মানুষ, পশু আর খাদ্য
সব সিদ্ধ হয় একসাথে
তবু কেনো
জীবনের স্পন্দন থাকে
ধ্বংসস্তূপের চূড়ায়??

মৃত্যু ফাদের অন্ধকারে
এ কেমন বাঁচার আকুতি ??

Tuesday, June 12, 2012

আজকাল বৃষ্টিতে এসিড মিশ্রিত থাকে
আর সমুদ্রের পানিতে ডিজেল
আমি কাকে বিশ্বাস করবো?
মাটি খুঁড়লে বিশুদ্ধ পানির বদলে
বের হয় লাভা
কত শত বছরের লুকিয়ে রাখা
আগ্নেয়গিরি থেকে
অনেক কস্ট চেপে রেখেছিলো
মাটির নীচে
আমি কাকে বিশ্বাস করবো?
কত শত বছর ধরে
প্রভুদের দাসত্ব করছি আমরা
আপনকে হত্যা করে
লুকিয়ে রেখে তাঁদের লাশ
মাটির নীচে
প্রতিদিন
দাফন করি অনাগত ভবিষ্যত
তারপর ছুটি খুনীকে ভাগ্য জেনে
দুর্ভাগ্যের পেছনে
চামড়ার কারুকার্য দেখে
মুগ্ধ হয়ে ভুলে যায়
প্রতারক সূর্যের আলো
ধাধিয়ে দেয় চোখ
আমি কাকে বিশ্বাস করবো?
আস্তিনে শুখিয়ে গেছে
মৃত্ শিশুর রক্ত
যুগ যগ ধরে প্রিয়জনের লাশের উপরে
দাঁড়িয়ে আগুন্তকের দাসত্ব করি
মুগ্ধ বিমোহিত

Saturday, June 9, 2012

নারী বিষয়ক নীতিমালা

সচারচর

প্রভুদের কিছু ভৃত্য থাকবে
দালালদের কিছু পদলেহনকারী থাকবে
তাদেরও কিছু পৃষ্টপোষক থাকবে
এই থাকাথাকি নিয়ে
কিছু মানুষের থাকাথাকিতে বিরম্বনার সৃষ্টি করবে
এইভাবে গড্ডলিকা প্রবাহে
কেটে যাবে
নেয়েখেয়ে বাসন মেজে ঘষে খসে দিন
১৭০০ সালের সাথে ২০১২ সালের পার্থক্য
খুঁজে হয়রান
শোষক আর শোষনের কোন পার্থক্য নাই
তবে এইসব করার মাধ্যমগুলোতে কিঞ্জিত পার্থক্য দেখা দিয়েছে
রিমোট কন্ট্রোল্ড অপারেটেড প্লেন এখন বোমা ফ্যালে দেশে দেশে
হাইস্কুল ড্রপআউটরা এখন দেশপ্রেমিক সৈন্য হয়ে
দেশে দেশে ধর্ষন করে জাতীয় খেতাব পায়
খুনাখুনি যত বেশী নোবেল শান্তি পদক প্রাপ্তির সুযোগ তত বেশী
বদলে যেতে আর বদলে দিতে
খুনাখুনি আর খুনিদের পদলেহন
মার্কস এর রচনা অনুবাদ করে কি দেশপ্রেমিক হওয়া যায় ?
মার্কস তো বিশ্বের মজদুরের কথা লিখেছে
তুমি কার কথা লেখো ?
মাও চীনের ভবিষতের কথা ভেবে গেরিলা যুদ্ধ করেছিলো
তুমি কার কথা ভাবো ?

যখন তখন

আবেশ

নিখোঁজ সংবাদ

শনির দশা

বানিজ্য

বিপাক

পুনরাবৃত্তি

বাংলাদেশের সীমান্তে গনহত্যা বন্ধ করো

মৃত্যু

বিনিময়

পবিত্র মূর্খ

অদৃশ্য

লালসা

পরিকল্পনা


ইচ্ছা

একবার এক আকাশ দেখে বলেছিলে
তোমার মনের যদি ছবি আঁকতে পারতাম
তাহলে সেটা এই রকম দেখতে হতো
একবার এক টলটলে জল দেখে
তুমি বলেছিলে
তোমার চোখের যদি ছবি আকতে পারতাম
তাহলে এই রকম হতো
এই রকম কি রকম
জবার মতো লাল ঠোটে
সবুজ ঘাসের মতো হৃদয় নিয়ে
একবার তুমি বলেছিলে
এইসব কিছুই তোমার প্রতিবিম্ব
একবার বৃষ্টিতে ভিজে গেলে
মাটি থেকে আসা সোঁদা গন্ধে
মুখ ডুবিয়ে বলেছিলো
তোমার শরীরে বনফুলের গন্ধ
একবার ভালবেসে হাত ধরে
বলেছিলো
এই হাত ছেড়ে দিওনা
আমি মরে যাবো তাহলে

উপেক্ষা

তোমার দরজার বাইরে
দাঁড়িয়ে ছিলাম অহর্নিশি
অনুভব করোনি
ঝরে যাওয়া হলুদ পাতার উপর দিয়ে
হেঁটে চলে গেছো
ভ্রুক্ষেপ না করেই
অভিনয় তো করিনি
সহজভাবে বলেছি
সারাদিন খুঁজেছি
সারাটা আকাশে
কোন ছায়া দেখে
দৌড়ে গিয়েছি
ভেবেছি
এই বুঝি সময় হয়েছে
নক্ষত্র চেনার

চুপচাপ কবিতা পাঠ

আমার মুখোশ

বিকলাঙ্গ স্বাধীনতা

অবশ

সহজ

দ্বীপান্তর

প্রস্থান

অস্থি

কঙ্কাল

উইপোকা

জীবনে প্রথম পুরুষে ছুঁয়ে দিলো
তো আমি হয়ে গেলাম অস্পৃশ্য
বাকী পুরুষরা বললো
তোমাকে ভোগ করতে পারি
তবে ভালবাসবোনা
এক পুরুষে অনেক নারীকে ছুঁয়ে পবিত্র হলো
বাজারে অভিজ্ঞতার আদর হলো
এইভাবে চাহিদা ও যোগান রেখাতে
...ভেসে মনোবল থেরাপী করে নিলাম
লাভক্ষতির অংক কষে কষে
ক্ষতিগুলোকে কপালের ঘাটতিতে রেখে দিলাম
গত বছরগুলোর দুর্ভোগ
কেটেছে নর্দমার পানিতে ভেসে
ঝর্ণাতে এসে সেই পানি পবিত্র হয়েছে
বোতলে উঠে সেই পানি হয়েছে আবে জমজম
মাঝে মাঝে ক্ষুধা দেহমন ছেড়ে চোখে যেয়ে বসে
তখন হীনমন্যতার এক নতুন সিকিউরিটি বন্ড
বেচাকেনা শুরু হয় বাজারে
দিনরাত নর্দমাতে সাঁতরেও
পুরুষেরা হাঁসের পালকের মতো পবিত্র

Sunday, May 13, 2012

পাশবিক

খাবি খায় অন্ধকারে
সাঁতার না জানা মানুষ পানিতে যেমন খাবি খায়
ওরা মুচকি হাসে,
কৌতুক চোখে দ্যাখে অন্যমনস্ক
ষণ্ডযুদ্ধে রক্তাক্ত ষাঁড়কে দেখে মানুষ যেমন উল্লাস করে
রেসলারের রক্তাক্ত দাঁত শূন্যে
উড়ে যায় প্রতিদ্বন্দ্বীর ঘুষিতে
উল্লোসিতা ষোড়শীর হাটুতে এসে ঠক্কর খায়
তখন নিজের হাটুতে রক্ত
দেখে সে চিৎকার করে উঠে
 দূর থেকে অন্যকে রক্তাক্ত হতে দেখাতে
যেমন আনন্দ
এমনকি সেই রক্তের ছিটে কোনভাবে
শরীরে লেগে গেলে
অন্য এক অনুভূতি হয়
ঘৃনা আর বমি উথলে উঠে
বুক থেকে
বিভেদ ঘৃনা থেকেই জন্ম নেয়
পাশবিকতা সবার অন্তরে লুকিয়ে থাকে
সেটা ঢেকে রাখতে গোলাপের চাষ
মাঝরাতে পূর্নিমার আধা ভক্ষিত চাঁদ
বুকের অর্ধেকটা আড়াল করে রাখে
অন্যের দুঃখ অনুভব করার
ক্ষমতা অবশ হয়ে যায়
তাই রক্ত ভাল লাগে
অন্যের গর্দানে, শরীরে, সন্তানের মৃতদেহে।

Saturday, May 12, 2012

পরিপাটি সব পালক
অগোছালো হয়ে যায়
শব্দের মতো ছেড়া ছেড়া
এলোমেলো
জুড়ে বসে মনে
... প্রতিবেশীর হেঁসেল থেকে
সুখাদ্যের ঘ্রানের মত
জটলা করে
সুখ স্মৃতি
অগোছালো বৈঠকখানাতে
এক ফিরে আসা
দুপুরে
ফাটা ফাটা রোদ এসে উঠোনে
প্লাবন এনে
স্বপ্ন দেখায়
সুফলা মাঠের
সব অগোছালো থাকে
জীবনযাপন

আমার বন্ধু ভয়

কষ্ট হবে সেই ভয়
লেগে থাকে সব সময়
ফেউয়ের মত
পিছু ধাওয়া করে
ভয়
ভয় হয় সবসময়
হারাবার
এমন কি যা ছিলোনা কোনদিন
তা
হারিয়ে ফেলার ভয়
লেগে থাকে সারাক্ষন
তুমি নাই
তোমার চাইতেও বেশী
আপন এখন
তোমাকে হারাবার ভয়
আর তো কিছু নেই
কেউ থাকেনা সাথে
শুধু ভয় থাকে
চুন লাগাবার আগেই
খসে যাবে পান থেকে
সেই ভয় থেকে যায়
কেউ থাকেনা সাথে
শুধু ভয় থেকে যায়
 

Wednesday, May 9, 2012

সুন্দর

পোষাক বদল না করেই
বলে ফেললাম
সহজভাবে
ঘরে বাইরে
সেখানেই অমিল
ভুলের শুরু
সবাই ভুল করে
এইভাবে
সহজ হলে
সস্তা ভাবে
মেকী হলে
কিনে ফ্যালে দ্বিগুণ দামে
পচাতেই খুশী থাকে
সহজ সরল সোজা ভাষাতে
অপমান ভাবে
সত্য সুন্দর
হোক তা সে যতই কর্কশ
চোখ দিয়ে যা দেখি
মগজের ভেতরে যা বুঝি
তার সাথে কোন সংঘর্ষ নাই
তাই আমি সুখী
তুমিও সুখী হয়ে যাও
...তোমার পরিসর জেনে
নিজেকে জেনে
নিজের সম্ভাবনাগুলোকে জেনে
তুমি কি ?
তা শুধু তুমি জানো
নিজের জন্য যদি গর্বিত না হও
তাহলে বদলে ফ্যালো
ধোলায় করে ফ্যালো মগজ
তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে দ্যাখো
কি বিশাল আর কি সুন্দর
সুশীতল হাওয়াতে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে
চোখ খুলে দ্যাখো
জীবন সংক্ষিপ্ত
আর কি কি কাজ বাকী আছে
জীবনের ঋন পরিশোধের
সুদে আসলে
আর কি কি কাজ বাকী আছে ?
কেনো এসেছো এখানে?
মৃত্যু কি শুধু আজই এলো ?
লাশ কি শুধু আজই ভাসলো ?
কোথায় ছিলে এ্যাত কাল ?
আজ জেনেছো ভাই গেছে তাই
কাল শোনোনি
...সেই কান্নার শব্দ

বিশ্বাস না হয়
নদীগুলোকে শুধাও
লাশ ধুয়ে ধুয়ে
শুখিয়ে মরু হলো পদ্মাপাড়

এমন ছিলো সেই কান্না
ফিসফিসানো
শব্দ হলে যদি
লাশ হয়ে যায়
শকুনদের শুধাও
লাশে অরুচি ধরেছে

চারিধারে শুধু ভাগাড়
বসে ঝিমানো যো ছিলোনা

সেই বৃষ্টি আর হয়না

সেই বৃষ্টি আর হয়না
সেই কাদামাটি ধুয়ে ধুয়ে আর যায়না
আটকে থাকে আবর্জনা একখানে
সেই পূতিগন্ধময় পুরানা কাসুন্দিতে
পড়ে আছে মুখ থুবড়ে আকাশ
বিষাক্ত মেঘে মেঘে মনগুলো ছেয়ে গেছে
সেই ঝড় এখন আর হয়না
মিথ্যার দেওয়ালগুলো অকেজো কাগজের মত
উড়িয়ে নিয়ে যায়না
মিথ্যাগুলো এখন শক্ত দেওয়াল হয়ে
দাঁড়িয়ে আছে সত্যের পথ রোধ করে
সেই বৃষ্টি আর হয়না
গলে গলে আর যায়না
সেই কাদামাটি ধুয়ে ধুয়ে গেলে
ঝকে ঝকে হতো আকাশ
চোখ থেকে উড়ে যেতো ধুলোবালি
দেখা যেতো সত্যের উদ্ভাসিত হাসি
সারাদিন সামনে দাঁড়িয়ে
তবু খুজতেঁ থাকো আকাশে আকাশে
নক্ষত্র যদি ধরতে পেতে
তাহলে তাকেও রাখতে ফেলে
দ্যাখ না দ্যাখ
তোষকের নীচে
চোখ বন্ধ করে হাটছিলাম
তাই হোচট খেলাম
চোখ খুলে হেঁটে হোচট খেয়ে
কপালের দোষ দিয়েছি

... সহজ আর সাদামাটা
অপবাদ দেওয়া সহজ
সহজ মানুষগুলোকে
প্রতারনা করাও সহজ

জটিল লোকেরা তাই
সহজ সহজ
ধোঁকা দেয় সহজেই

চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে -- লালন কি বলে

চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে
আমরা ভেবে করবো কি
ওরে ঝিয়ের পেটে মায়ের জন্ম
তোমরা তাদের বলবে কি
ছয় মাসের এক কন্যা ছিল
নয় মাসে তার গর্ভ হলো

আবার এগারো মাসে তিনটি সন্তান
কোনটা করবে ফকিরী ফকিরী

ঘর আছে তার দুয়ার নাই
লোক আছে তার বাক্য নাই
কেবা তাহার আহার যোগায়
কে দেয় সন্ধা বাতি সন্ধ্যা বাতি


লালন ফকির ভেবে বলে
মায়ে ছুইলে পুত্র মরে
আরে এই কথার মান না জানিলে
হবে না তার ফকিরী ফকিরী।।

চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে
এখন দেখা যাক এই গানের মাধ্যমে লালন কোন তথ্য আমাদের কাছে পৌচ্ছে দিতে চেয়ে ছিলেনঃ
Uterus, a hollow organ inside a women’s body
where a baby grow up after fertile egg and sperm matches
চাঁদের মতো গোলাকার দেখতে মাতৃগর্ভ
আর শিশুকে চাঁদের সাথে তুলনা করা হয়
এক চাঁদকে তুলনা করা হয়েছে মাতৃগর্ভের সাথে
আরেক চাঁদ হলো ভ্রুন

ছয়মাসের ভেতর এই ভ্রুনে জীবনের সঞ্চার হয়
নয়মাসে এই ভ্রুন পরিপুর্ন শিশু হয়ে
পৃথিবীতে আসার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়
আর এগারো মাসে এই শিশু হাটতে শেখে
(আমার শিশুরা ৯ মাসেই হাটতে শুরু করে – স্টান্ডার্ড
সময় ১১ মাস)
হাটার আগে শিশু হামা দিয়ে চিনে নেয় তার পরিসর
কতদূরে সে যেতে পারে
ভ্রুনে শিশু থাকাকালিন এই মায়ের ভ্রুন এক মানবের জন্মের
প্রতিশ্রুতি দেয়
মানুষ আছে বাক্য নাই – শিশু মানব
কিন্তু কথা বলতে পারেনা মাতৃগর্ভে

ঘর আছে দুয়ার নাই – ভ্রুনে থাকতে পারে কিন্তু বেরুতে
পারেনা সময় না হলে। এক চক্রের ভেতর দিয়ে যায় নয় মাস। সেই চক্রের বিভিন্ন সময়ে
শিশুর বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ একটু একটু করে গড়ে উঠে। অন্ধকারে থাকে শিশু কিন্তু
মায়ের নাড়ির সংযোগ থাকে শিশুর নাড়ির সাথে। সেইভাবেই সে আহার করে।

কেবা তাহার আহার যোগায় কেবা দেয় সন্ধ্যাবাতি

৯ * ৩ = ২৭
৬ * ৩ = ১৮
২৭ – ১৮ = ৯
লালন ফকির ভেবে বলে
মায়ে ছুইলে পুত্র মরে
আরে এই কথার মান না জানিলে
হবে না তার ফকিরী
  • ‎[মানব সমাজে এক
    বহুল প্রচলিত প্রথা আছে। বিবাহ করে ঘরে
    স্ত্রী নিয়ে আসা ঘরের কাজের জন্য, ক্ষেতের কাছের
    জন্য, গরুর দেখাশোনার জন্য আর সন্তান উৎপাদন করার জন্য। স্ত্রী হলো অনেকটা হালের
    বলদের মত - উৎপাদনের একটি উপাদান।]

    এই উপাদান যখন
    গর্ভবতী হয় আ...র পুত্রসন্তান লাভ করে আর যদি এই পুত্র সন্তান
    ভূমিষ্ট হবার সাথে সাথে মারা যায়। তখন এই স্ত্রী বা ছেলের মা’কে সবাই দোষোরোপ
    করে “পুতখেকো” বলে।

    অথচ সেই চাঁদের
    গায়ে যে চাঁদ লেগেছিল সেই চাঁদ লাগাতে - না চাঁদের বাবার,
    না চাঁদের মায়ের,
    কারুর কোন অবদান
    বা করার কিছু ছিলনা। জৈবিক চাহিদা মেটানো আর বাচ্চা বানানো এই তো মোদ্দা কথা।

    তবু প্রাকৃতিক
    নিয়মে মা যখন গর্ভবতী হন তখন তার মধ্যে এক ধরনের ল্যাবন্য দেখা দেয় । মা হবার
    আনন্দে। পরিপূর্নতা আসে। আর সেই জন্যেই এই নয় মাসে মা
    হাজারও কষ্ট সহ্য
    করেন। আর জন্মের সাথে সাথে সেই সন্তানের মৃত্যুতে সেই চাঁদ বা গর্ভ খালি হয়ে যায়।
    চাঁদ বিদায় নিয়ে চলে যায় আরেক চাঁদের কাছ থেকে তারপর পৃথিবীর আলো দেখতে না দেখতেই
    সে চিরবিদায় নিলে দোষ হয় মায়ের – ছেলে খাবার
    অপরাধে।

    কেউ দেখেনা,জানেনা,
    বোঝেনা সেই নয়
    মাসের ব্যাথা, কথা, আশা, নাড়ীর যোগাযোগ। সন্তান হন্তার অপরাধবোধ আর সন্তানের জীবন যা বাঁচাবার
    ক্ষমতা না ছিল মায়ের না, ছিল বাবার। না
    ছিল প্রতিবেশীর, না ছিল সেইসব লোকের যারা একজন মা’কে–
    “ছেলেখেকো”
    বলে দোষারোপ করে –
    তবু যেন এটা একটা
    প্রথা – সন্তানের জন্ম যে দেয় – যদিও সন্তানের
    জীবন সে দেয়নি – তবু সেই মা'কেই দায়ী করা হয় ভূমিষ্ট শিশুর তৎক্ষানিক মৃত্যুতে।

    এই হলো ...।
    মায়ে ছুইলে পুত্র
    মরে
    আরে এই কথার মান
    না জানিলে
    হবে না তার ফকিরী
    .........শেষ কথা।।
এক রাস্তা ভর্তি গাড়ি
শবযাত্রা
মৃত্যুর পরেও উৎসব
জন্ম নিলেও উৎসব
চারিদিকে লেগে আছে উৎসব
এ্যাত উৎসবের মধ্যখানে
কেনো আমি এ্যাত ম্লান ?

ফাঁস

রুদ্ধ দরোজার
ভেতরে শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ ছিলো
দরোজাতে একটি হাত ছিলো
শুধু দরোজা বন্ধ ছিলো
মনের
ভেতরে একেবারে হাটের মতো
মধ্যরাত্রিতে পাঁড় মাতালের গোঙানি
হেরে গেছে শেষ কড়ি
ফেরী করেছে ইচ্ছাশক্তি
নেশার বদলে
রাতারাতি বদলে যাবে কপাল
অস্মভব এক স্বপ্ন নিয়ে
ঘুমিয়েছিলো রাত্রি
শর্ত ছিলো
কড়া
সত্যকে দিতে হবে ফাঁসী
নয়তো দ্বীপান্তর বাকী জীবন
শর্ত মেনে
সত্যের ফাঁসী হলে
স্বপ্ন গেলো লুট হয়ে
বেঁচে রইলো গোঙানি

প্রতারনার বেড়াজালে বসে
পাঁড় মাতালের

খেলা

আমি যখন এলাম
তুমি তখন ছিলেনা
এমনই হয়
আমি যখন তোমাকে পেতে চাই
তুমি তখন আমাকে পেতে চাওনা
 আমি যখন তোমাকে ভালবাসি
তখন তুমি ভালবাসাকে ইতিহাস ভেবে
ফেলে দাও ধূলোর নীচে
আমি যখন অপেক্ষা করি
তুমি তখন শুরু করো ভ্রমন
অজানার দেশে
অনন্তকাল ধরে
আমার বুকের মাঝে অদৃশ্য কাঁটাতারের
দেয়াল রেখে

ফিরে আসা

তখন সময়ই ছিলো এমন। ইসলাম "শান্তি" র ধর্ম। এই প্রচলিত বিশ্বাসের ভীতে আঘাত করার জন্য সারা বিশ্বে আরও একবার সংঘবদ্ধ আয়োজন চলছিল। ৯/১১ এর পর পর । ইসলাম শান্তির ধর্ম হোক বা সন্ত্রাসের - নাম বদলের পালা চলছিলো অন্য কারনে। যারা এই নাম বদলের আয়োজনে বিশ্বের লক্ষ কোটি ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী মানুষকে হয়রানি, ল্যঞ্ছনা, হত্যা করছিলো তারা আরও একটি জিনিষের পরিবর্তন করছিলো তা হলো সাম্রাজ্যবাদীদের প্রতি সাধারন মানুষের দৃষ্টিভংগী।

দেশে দেশে শুধু এনজিও পাঠিয়ে কাজ হয়নি। ইসলামে বিস্বাসী মানুষের সংখ্যা অনেক বেশী। সারা বিশ্বে এদের ব্যাপক হয়রানীতে অতিষ্ট হয়ে একসময় ঘরে ঘরে মুক্তিযোদ্ধা তৈরি হবার উপক্রম হয়। ইসলাম জেহাদ ঘোষনা করে। সারা বিশ্বের মুসলমান সেদিন যা বুঝতে পেরেও অসহায় অবস্থায় দিন কাটিয়েছে তা হলো ঃ ইসলামকে ফাঁদে ফেলা হয়েছে। যারা ইসলামে বিশ্বাসী তাদেরকে এক ধরনের ঘৃন্য আর অমানবিক ফাঁদের আটকে ফেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে খাঁচার চার পাশে। যদি বাচতেঁ হয় তাহলে এই আগুন পেরুতে হবে । যারা লাফ দিতে না জানে তা এই আগুনে পুড়ে মরবে ।

পশ্চিমা দেশগুলোর সাধারন মানুষের ইসলাম সম্পর্কে তেমন ধারনা না থাকার ফলে মিডিয়াগুলোর ইসলাম বিরোধী কথাবার্তা সবাই এক বাক্যে গ্রহন করে। আর ৯/১১ এ আনুমানিক পাঁচ হাজার মানুষের মৃত্যুকে প্রচার মাধ্যমগুলো এমন ভাবসাব করে যেনো এই ৯/১১ এর কারনে যুক্তরাষ্টের সব নাগরিকের জীবন বিপন্ন হয়ে গ্যাছে । অথচ ৯/১১ ছিলো একটা সাজানো ঘটনা। এটা পেন্টাগনের দ্বারা ঘটানো সাজানো ধবংস।

[চলবে ]

তখন থেকে

আসলে আমি এখানে
শুধু দৌড়ায় সময়ের পিছু পিছু
এইসব জেনেও
যে সময় আমাকে সময় দেবেনা
একটুও
সময় করে কাছে বসবেনা
সময় করে চোখে চোখ রাখবেনা
সময় করে হাত ধরে বলবেনা
তুমি কেনো এ্যাত চিন্তা করো
সময় হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে
কারন সময় নিজেই প্রতারক
নিজেই লাফায়
ঘেও কুকুরের মত
নিজেই থেমে থাকতে পারেনা একদন্ড
আমি শুধু ঝাঁপসা চোখে
দূর থেকে চেয়ে থাকি
সময়ের পানে
আসলে আমি বুঝিইনি
কতটুকু সময় ছিলো
সময়কে জানবার
দম বন্ধ করে ডুবে ছিলাম পানির নীচে
আমার মৃত্যু ঘটেছে সেখানেই
পানি তেমন গভীর ছিলোনা
তবে পানির ভেতরে ছায়া ছিলো
হায়েনার
ঘিরে দাড়িয়েছিলো পানির চারিপাশে
উপরে উঠলেই ছিড়ে খাবে
এক সময় আমার লাশ ভেসে উঠলে
শবদেহে জমা রক্ত
হীম শীতল
হায়েনারা হতাশ হয়ে গেলো চলে
অন্য শিকারের খোঁজে

Tuesday, May 8, 2012

এখন উৎসবে ব্যস্ত সবাই

নিখোঁজ মানুষের লাশ ভাসছে কাগজের মত
এ্যাত জনবহুল শহরে
কেউ শোনেনি কারুকে হত্যা করতে
কেউ দ্যাখেনি কারুকে লাশ ভাসাতে
সবাই ব্যস্ত যার যার উৎসবে
গলা পচা লাশে উৎসব করে
পচা পানিতে
সবাই মত্ত উৎসবে

১৯৭২-৭৪ সালে এইরকম লাশ ভাসতো
সেই সময়ও সবাই ব্যস্ত ছিলো উৎসবে
তাই কেউ লেখেনি সেই ইতিহাস
এখনও এইসব লাশেগুলো কাগজ শুধু
কেউ জানতে চায়না
এদের লাশ হয়ে যাবার কারন
যারা এদের হত্যা করেছে
তারা আল সামস ছিলো কিনা আল বদর
সবাই উৎসবে মত্ত

লাশগুলোকে পালটে দেখলে
হয়তো দেখা যাবে
এদের একজন ইলিয়াস আলী
বা শেখ মুজিব
বা শেখ হাসিনার ছেলে জয়

এক দিন প্রতি ঘর থেকে কেউ না কেউ
এইভাবে কাগজের মত
লাশ হয়ে ভাসবে
তখন ইতিহাস লেখা হবে

Sunday, May 6, 2012

জনম জনম ধরে

[প্রথম প্রকাশঃ দৈনিক ইত্তেফাক ঃ ঢাকা ঃ মঙ্গলবার, ৮ই শ্রাবন, ১৩৯৭]

গত পরশুদিন খুব বৃষ্টি হয়েছিলো। একেবারে রাস্তাঘাটে পানি আর পানি। হাঁটু পানি জমে ছিলো বাজারের ভেতর, বাইরে বেরুবার পথে রেললাইনের নীচে সবখানে । পিচ্চি কুলিগুলো লুঙ্গির কোন বগলে নিয়ে মাথায় ঝুরিভর্তি তরিতরকারি,  চাল, ডাল বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল পানি ভেঙ্গে।  আজ আর তেমন বৃষ্টি হয়নি । রেললাইনের নীচে ময়লাভরা ড্রেনগুলোতে লম্বা নখের মত কয়েকটা  পোকা একখানে জমে বজবজ করছে। যেখানে সেখানে অন্য দিনের চেয়ে বেশী পানি জমে আছে।  মাটিও ভিজে ভিজে। দেখলে মনে হয় গতকাল বৃষ্টি হয়েছিলো। তবে বৃষ্টি না হলেও মেঘলা ছিলো সারাটা দিন। গুমোট ভাব। রোদের মুখ দেখা যায়নি। আজ এখন এই বেলা দুইটা অবধি রোদের মুখ দেখা না গেলেও আকাশটা পরিচ্ছন্ন। গতকালের মতো মেঘলা নয়। মনে হচ্ছে আজ বিকেলে সেস রোদের ঝলক দেখা গেলেও যেতে পারে। নরম মাটিতে পিঁপড়েরা ঢিবি বানিয়েছে উঁচু উঁচু । কামরাঙ্গা গাছের ভেঙ্গে যাওয়া একটা ডাল গাছটার সাথে এখনও একটুখানি লেগে আছে । দোল খায় বাতাসে। মনে হয় এক্ষুনি নীচে পড়বে। অথচ পড়েনা। নিমগাছে ময়নারা এসে হুল্লোড় করে। নরম মাটি থেকে কেঁচো টেনে টেনে খেয়েছে তাই।  নিমগাছের নীচে বাধা ছাগল ভ্যা ভ্যা করে ডাকে। মাথায় নিমফল পড়ে টুপটাপ। চুপ করে কিছুক্ষন। কান ঝটপট করে। মুখ ঘুড়িয়ে ল্যাজের নীচেটা চুলকে নেয়, হাটুগুলো ভাল করে চেটে চেটে পরিস্কার করে নেয় তারপর আবার ভ্যা ভ্যা ডাক ছাড়ে। অপরিচিত জাগাতে এলে ছাগলরা স্বজন হারাবার ব্যাথা প্রকাশ করে এভাবেই ঘন ঘন ডাক ছেড়ে। যদি ডাকে সাড়া দেয় কেউ তাহলে বুঝবে যে পরিচিত ছাগলের বা পরিবেশের কাছাকাছি আছে।

আজ প্রায় দেড় বছর পরে শওকতের সাথে কথা হলো আলেয়ার । যোজন যোজন দূর থেকে কথা বলছিলো শওকত অথচ মনে হচ্ছিল পাশে বসে কথা বলছে। কিন্তু শওকতকে মনে হচ্ছিল যেন অন্য মানুষ। কঠিন কোন পাথরের মূর্তির মুখ থেকে শব্দ বেরুচ্ছে একটা একটা করে। আলেয়ার ভাল মন্দ কিছুই জানতে চায়নি শওকত । শধু বললো - আলেয়া, তোমার জন্য আমার আর কিছুই করার নেই। তুমি নিজের পথ বেছে নাও।

এ কথা উত্তরে কি বলবে আলেয়া ভেবে পায়না। গত দেড় বছর ধরে সে শওকতকে খুজেছে।  আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবাই বলেছে তারা জানেনা শওকতের ঠিকানা। কেঁউ কিছু বলতে পারেনা।  তবু আলেয়া হার ছাড়েনি। শওকত তাঁকে একেবারেই ভুলে গেছে। অনেক দিন হয়ে গেছে কোন খোঁজ-খবর করেনি।  তবু আলেয়া খুজেছে শওকতকে। কোথাও না পেয়ে অকস্মাৎ একদিন ফিল্মী কায়দায় শওকতের খোঁজ পেয়ে গেলো সে । শহরে এসে আলেয়া যেখানে থাকে সেখানে তার আপন কেউ নেই। আছে এক পাতানো খালা। এই খালা তাঁদের গ্রামেরই মানুষ। খালু মারা গেছেন অনেকদিন হয়ে গেছে।  ছেলে-মেয়ে-বুউ-নাতি ভরা সংসারে অনেক মানুষের আসা যাওয়া। আলেয়া গ্রাম থেকে এসে এখানেই উঠে। থাকে-খায় কেউ কোন প্রশ্ন করেনা। এক গায়ের মেয়ে খালা আদোর করে আলো বলে ডাকেন। খালার ছেলে বউরা বাচ্চাদের আলেয়ার কাছে রেখে এখানে ওখানে বেড়াতে যায়। খালার অনেক বড় বাড়ী, অনেক মানুষ, অনেক ঘর। এখানে থাকতে থাকতে আলেয়া সংসারের একজন সদস্যের মত হয়ে গেছে।  খালার বাসার নীচের তলাটা অনেকদিন খালি ছিলো।  বন্যার সময় যখন পানি এসে নীচের তলাটা ভরে যায় তখন ভাড়াটেরা চলে যায়।  তারপর বেশ ক'দিন ঘরগুলো স্যাতস্যাতে ছিলো। প্রায় মাস ছ'য়েক খালি থাকার পর ভাড়াটে এলো। আলেয়া গেল তাদের সাথে আলাপ করতে। আলাপ করতে করতে এক সময় শওকতের প্রসঙ্গ এলো। বয়সী এক মহিলা তার দুই ছেলে নিয়ে থাকে । মহিলা আলেয়াকে দেখেই প্রথম প্রশ্ন করে - তোমার বিয়ে হয়নি? আলেয়া মিথ্যা বলতে পারেনা। বললো - হয়েছে।

- জামাই কি করে?
- কি করে তা তো ঠিক জানিনা।
- সেকি কথা! তোমার স্বামী কি করে তুমি জানোনা ?
- কেমন করে জানবো, কাছে যে থাকেনা ।
- তোমাকে ছেড়ে দিয়েছে ?
- না, তাও দেয়নি।
- ছেড়েও দেয়নি আবার খোঁজ-খবর নেয় না এ আবার কেমন কথা !

ভদ্রমহিলা চোখ বড় করে। আলেয়ার হাতের উপরে সান্তনার হাত রাখে। বলে - বাড়ী কোথায় তোমার ?
-নড়াইল।
- আর জামাইয়ের বাড়ী?
- ফরিদপুর
- ফরিদপুর কোথায় ?
- রাজবাড়ি।
- কোন বাড়ির ছেলে?
- চৌধুরীর বাড়ির সেজ ছেলে শওকত। আপনি চেনেন খালাম্মা ?

- চিনি বৈকি। সে তো আমার ছেলেদের বন্ধু। এদের দাদূর বাড়ী তো ওখানেই ।

আলেয়া উত্তেজিত হয়ে উঠে। চোখের নীচের গভীর কালো রেখা শির শির করে । চোখ জ্বলা করে। ঠোঁট কাঁপতে থাকে। ভদ্র মহিলা আলেয়ার পিঠে হাত রাখেন। তারপর কিছুটা সময় চুপচাপ তিনি আলেয়ার উত্তেজিত চোখ, ঠোট প্রত্যক্ষ করেন। তারপর ধীরে ধীরে তিনি যা বলেন তার সারমর্ম হলো - শওকত প্রায় বছর খানেক আগেই দেশ ছেড়ে চলে গেছে। বিদেশের কোন দেশে থাকে তা তার ছেলেরা বলতে পারবে। সেখানে সে স্থায়ীভাবে বসবাস করে। তার ঠিকানা টেলিফোন নম্বর সব কিছুই ছেলেদের কাছে আছে। ওরা ঘরে ফিরলে সে নিয়ে রাখবে আলেয়ার জন্য ।

নড়াইলের যে গ্রামে আলেয়া থাকতো সেখানে একটা নদী ছিলো । খুব শান্ত নদী। কোন স্রোত নেই। জোয়ার-ভাটা কিছু নেই। যেমন শৈশবে ছিলো তেমতি কৈশরে দেখেছে তাকে । যৌবনে এসে মনে হতো এটা নদী নয় নদীর ফসিল। ফসিল দেখলে যেমন বোঝা যায় এটা কার ফসিল, মানুষ না জানোয়ারের; আর যদি জানোয়ারের ফসিল হয় তাহলে বোঝে যায় কোন জানোয়ারের; বাঘ, ভাল্লুক, কুকুর নাকি প্রাগৈতিহাসিক কোন জীবের। তেমনি সেই নদীটা দেখলে বোঝা যায় বহুদিন আগে সে স্রোতস্বিনী ছিলো । এখন মৃত। ফসিল । সেই নদীর ফসিলের পাঁড় দিয়ে আলেয়া স্কুলে যেতো । নদীর পাড়, আখের ক্ষেত, সরষের ক্ষেত, ডাল নয়তো আলু বোনা মাঠের পাশে আলের ওপর দিয়ে স্কুলে যেতো তারা । তাঁদের স্কুলটা ছিলো বাঁশের তৈরি বেড়া দিয়ে ঘেরা আর চালটা ছিলো টিনের। সূর্য মাঝ আকাশে এসে বসলে স্কুলে টেকা যেতোনা গরমে। ঘামের সোঁদা গন্ধ শরীরে শুকিয়ে গেলে স্কুল ছুটি হতো । স্কুলে আলেয়ার একটা বন্ধু ছিলো সাকেরা।

সাকেরা খুব কালো ছিলো । সাদাটে ঠোঁট আর বড় বড় চোখ ছিলো সাকেরার। খুব ভাল মেয়ে ছিলো সে। মাঝে মাঝে নিজের রংরের জন্য দুঃখ করতো । আলেয়া সান্তনা দিয়ে বলতো - তোর বাপের অনেক টাকা আছে। দেখিস তোর বাপ তোর জন্য ঠিকই একটা ছেলে কিনে ফেলবে। কথাটা সাকেরাকে তেমন সান্তনা দেয়নি। শুনে সে গম্ভীর হয়ে ডাগর চোখে অন্যমনস্ক হয়েছিলো শুধু। ঘরে সৎ মা আছেন। তিনটা বোন আছে সেই মায়ের ঘরে। সৎ মা বাবাকে সাকেরার জন্য টাকা খরচ করতে দেবেননা। শওকত ছিলো সাকেরার লজিং মাস্টার।


[চলবে ]

Saturday, May 5, 2012

শবের ডায়েরী

গভীর ঘুমে মনে হলো
কতগুলো ইঁদুর অন্ধকারে
মিটিং করছে ফিসফিসিয়ে
টেবিলটার নীচে

- আজ এই ঘরে কোন রান্না হয়নি
- এমনকি কোটাবাছাও নয়
- কাল যেমন দেখেছিলাম আজও তেমনি
অনড় থালাবাসনগুলো

দরোজাতে শব্দ পেলাম
কারা যেনো খাটিয়া নিয়ে এলো
খুব পরিচিত স্বর
আমার নিজের
গভীর ঘুমে মনে হলো
কারা যেনো আমাকে নিয়ে যাচ্ছে কাঁধে করে
গভীর ঘুমে মনে হলো
পানির স্পর্শ
দাঁড়িয়ে আছি ঝর্নার নীচে
লোবানের সুগন্ধ
আমার সবচেয়ে প্রিয়
গভীর ঘুমে মনে হলো
সুন্দর ধুষোর সন্ধ্যাতে
এক নদীর কিনারে আমার শবদেহ
স্থাপিত করা হলো
সোঁদা মাটির ঘরে
গভীর ঘুমে মনে হলো
আমার যাত্রা হলো শুরু
সম্পুর্ন এক নতুন জগতে

       

      মাঝ পথে

      চোখে স্বপ্ন নাই
      শান্তিতে বিশ্বাস করি
      ভুয়া আশ্বাসে আস্থা নাই
      কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে
      অনায়াসে কেটে যায়
      কারু কারু জীবন
      কঠোর পরিশ্রম করেও
      সেই পথে আর হয়না
      হাটা পাহাড় কাটা শেষে

      চেষ্টা স্বপ্ন নয়
      অর্জিত অধিকার
      ইচ্ছা হলেও ছিলে ফেলিনা
      আবরন বুকের খাচা থেকে
      ভয়ে ভয়ে ঢেকে রাখি
      কেউ যদি দেখে ফ্যালে
      বুঝে যাবে
      বুকের ভেতরে কিছু নেই
      শূন্য গহ্বর

      কোনকিছু না জেনেই

      হাত ধরলে
      তুমি স্পর্শ পেলেনা
      তোমার হাত অবশ
      হৃদয় ছুলে
      তুমি স্পর্শ পেলেনা
      তোমার হৃদয় নিখোঁজ
      তুমি ভেসে ভেসে আছো
      কিছু খড়কুটোতে

      কেনো বেঁচে আছো
      সে কারন না জেনেই

      ধুলোকাঁদা

      তুমি তো এমনটিই চেয়েছিলে
      বাদশা আকবর হতে
      আমি তোমার বাঁদি
      দেখো কেউ যেন না জেনে ফ্যালে
      কথাটা রেখো নিজেদের ভেতর
      দেওয়ালেরও কান আছে
      তুমি তো এমনটিই চেয়েছিলে
      ফাঁকা পাতিলের আওয়াজ বেশী
      চুপি চুপি ঢেকে রেখে
       কঙ্কাল নীচে
      হাত ধরেছিলে শুধু শেকল পড়াবে
      লুকিয়ে সোনার কাঁকনে
      আমার কান্না উবে যাবে মাটি না ছুঁয়ে
      আমার গোঙ্গানী নিস্তব্ধ হয়ে যাবে
      দেওয়ালে না ধাক্কা লেগেই
      তুমি তো এমন চেয়েছিলে
      মেরুদ্বন্ডবিহীন স্পিরিং এর তোতাপাখি
      গলার ভেতরে গামছা গুজে দিতে
      গুম করে দেবে সব শব্দ
      কবিতা বা গান
      মান অভিমান
      তুমি তো শুধু পেটের ক্ষুধা মেটাতে চেয়েছিলে
      তুমি তো শুধু দেহের ক্ষুধা মেটাতে ছোট ছোট
      পথ হেটেছিলে উদোম গায়ে
      তুমি তো এমনটিই চেয়েছিলে
      বাদশা আকবর হতে

      সন্ধিক্ষন

      এইতো স্বপ্ন পূরণ হলো
      চামড়া জড়ো জড়ো
      এখন সেই কাঁচা মরিচের মত
      মসৃনতা গত
      ইতিহাসের পাতাতে মরিচিকা
      ধুলো ধুসোরিত বেদনা জমা
      মগজের ভেতরে
      স্পৃহা ঝিমিয়ে যায়
      এইতো স্বপ্ন ছিলো
      পূরণ হলো
      হাতে হাত রাখলাম অবশ
      শান্ত ছিলো
      নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের উঠানামা
      অবয়ব
      এখানেই সব পথ শেষ হয়ে যায়
      প্রত্যাশার যবনিকা টানি
      চামরা জড়ো জড়ো
      ধনেখালি শাড়ীর পাড়ে
      মরে আছে তেলেপোকা
      স্যাতস্যাতে মেঝেতে পানের বাঁটা
      শুখিয়ে গেছে খয়েরের দাগ
      কালো কালো দাঁতের কোনে
      এইতো স্বপ্ন পূরণ হলো
      চামরা জড়ো জড়ো