Saturday, May 5, 2012

বাংলাদেশে অপরাধের উৎসব

অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার লোক কম তাই অন্যায় হতে থাকে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা না বলে অন্যায় করার নানা রকমের ফন্দিফিকির বের করলেই বোধহয় অনেক লাভ, ব্যক্তিগতভাবে। আমরা সবাই অস্তিত্বরক্ষার জন্যেই করি সব কিছু, যা কিছু করি। আমিও তাই করি। ভাবি - নিজেকে বাঁচিয়ে, নিরাপদে রাখলাম বহুকাল। অনেকেই নিরাপদে আছে মহা বিপদের মাঝেখানে। ভাবছি, কিভাবে এটা সম্ভব ? মহা বিপদের মাঝে মানুষ কিভাবে মহা নিরাপদ থাকে? টাকা মুখ বন্ধ করে রাখতে পারে।"সম্পদের শক্তি" হলো সকল "অন্যায়ে"র চালিকা শক্তি। 
জনগনের কোন শক্তি নাই।

২০১২ সালে বাংলাদেশের গনতন্ত্রকে গুলি করা হয়েছে, উলংগ করে টেনে হেচড়ে ট্রাকে তোলা হচ্ছে

এটা আমার ধারনা। আমার ধারনা ঠিক বা ভুল সে বিতর্কে যাবার দরকার নেই। দরকার নেই এই কারনে যে সবাই সেটাই করে, বা যা  করবে, বা যা করে, তা করে তাঁদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে সাহায্য করবে বলেই করে।

স্বাধিনতা যুদ্ধ সম্পর্কে অনেক মানুষের অনেক ধারনা। গৎবাধা যে ইতিহাস আছে তা সত্য নহে। কারা এই যুদ্ধ করেছে ? আমি খুব মনোযোগ দিয়ে অধ্যাপক আনু মোহাম্মদের একটি বই পড়লাম । বইটির নাম "কোথায় যাচ্ছে বাংলাদেশ "কোথায় যাচ্ছে বাংলাদেশ ? বাংলাদেশ সেখানেই যাচ্ছে যেখানে বাংলাদেশের কতিপয় জনগন দ্বারা সংঘটিত অন্যায়গুলো বাংলাদেশকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সাথে যাচ্ছে। আর এই অন্যায়গুলো কিভাবে রোধ হবে? কিভাবে রোধ হবে এই বিষয়ে চিন্তা করার কোন প্রশ্নই উঠেনা। রোধ না করে কি কি লাভ হচ্ছে। কার কার লাভ হচ্ছে এইটা যদি জানা যায় তাহলে এই নিয়ে চিন্তা করে কেনো কোন লাভ নেই বা কোন অন্যায়ের সুরাহা করার কথা কেউ কেনো ভাবেনা তা জানা যাবে। কোথায় যাচ্ছে বাংলাদেশ - এই বইটিতে অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ সুন্দর করে তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের অনিশিচত যাত্রা বা ভ্রমন কাহিনী।

  বইটি পড়ার জন্য আমি সবাইকে অনুরোধ করবো । বইয়ে কি লেখা আছে তা নিয়ে আমি আলোচনা করবোনা বা এই বইয়ের কোন  কিছুই তুলে ধরবোনা। তাহলে পাঠকের আগ্রহ নস্ট হয়ে যাবে। আমার এই সাদামাটা নোটের উদ্দেশ্য ভিন্ন। তবে বাংলাদেশ কোথায় যাচ্ছে সেই প্রসংগে মনে পড়লো - বাংলাদেশের এই অনিশ্চিত ভ্রমনের একটি খুব গুরুত্বপূর্ন সঙ্গি হলো "অন্যায় "।

মানুষ অন্যায় কেনো করে ? মানুষের অন্যায় করার কারন অনেক জটিল - একটি রকেট সায়েন্স! প্রশ্ন করি নিজেকে - আমি মিথ্যা কেনো বলি ? সত্য জানালে আমার উদেশ্য ব্যহত হতে পারে। তাই একজন প্রতারককে যদি ঠিকভাবে জানা যায় তাহলে সারা বাংলাদেশের ঘরে ঘরে প্রতারকের কাছে যেয়ে তাদের কেমন চেহারা তা দেখা লাগেনা।   আজকে বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক চেহারা দেখলেই আন্দাজ করা যায় - কোথায় যাত্রা করেছে বাংলাদেশ । বাংলাদেশ আদৌ কোথাও যাচ্ছে কিনা। একবার এক ব্রিজের উপরে এক ট্রেন থেমে ছিলো বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারনে। নীচে, অনেক নীচে বনভূমি আর একটি খালের মতো স্রোতহীন নদী। ভাবছিলাম এই ট্রেন আর কোনদিন যদি না চলে। আমরা সবাই যুগ যুগ ধরে এখানে আটকে থাকবো ব্রীজের উপরে। বাংলাদেশ আটকে আছে । ঠিক সেইভাবে যেভাবে একটি পিন দিয়ে কাগজ আটকে রাখা হয় নোটিশবোর্ডে। ...। কালো শ্রমিক কৃতদাসেরা বিদ্রোহ করলে যেমন গলায় রশি বেঁধে শহর বা গ্রামের বা গঞ্জের মাঝখানে বা বাজারে বা জনবহুল এলাকাতে ঝুলিয়ে দেওয়া হতো সতর্ক করার জন্য - "বিদ্রোহ করার ফল কি হতে পারে " ... ভয় ধরিয়ে দেওয়া হতো মানুষের মনে।

এই ভয় ধরিয়ে দেবার রীতিনীতি বদল হতে থাকলো যুগে যুগে।
সেই একই কারনে । যে কারনে বাংলাদেশ চলেছে এক অনিশিচত গন্তব্যে । "অন্যায় " করতে পারার জন্য " ভয় ধরিয়ে দেওয়া" বা "ভীতি প্রদর্শন" করে মানুষের আবেগের মধ্যে এক চিরস্থায়ী বসত করা অতি আবশ্যক। ধর্ম । ধর্ম মানুষের মনে ভীতির এক ঘর করে দেয়। সেই ঘরে নানাভাবে নানাজনে নানা রকমের ভীতিকে সাজিয়ে রাখে দুর্লভ পাথরের মতো । মানুষের আবেগ নিয়ন্ত্রন করার জন্য "অন্যায় " এসে দেখে যায় কার মনের ঘরগুলো কি কি উপাদান দিয়ে তৈরি । অন্যায়ের জানার খুব দরকার এইসব ঘরে ভিতীকে যতদিন টিকিয়ে রাখা যাবে জুতসই করে অন্যায় তত দিন অবাধে অন্যায় করবে । সেই ঘরে চুপচাপ ভয়রা বসত করে । অদেখা শাস্তির ভয় আর অজানা পুরস্কারের লোভ।

 ধর্ম প্রসঙ্গ এলেই মানুষ খুব আবেগপ্রবন হয়ে যায়। এটা অন্যায়কারীদের ভিতী প্রদর্শনের সাফল্য। ধর্মকে আঘাত করিনা মনের ভেতরে সেই ভীতির মজবুত ঘরকে আঘাত করি। যা মানুষকে টেনে রাখে পেছনের দিকে। কথা বলতে দেয়না অন্যায়ের বিরুদ্ধে। সেই ভীতি। বিদ্রোহ করলে গঞ্জের মধ্যে গাছে ঝুলে থাকতে হবে। অথবা ঘর থেকে টেনে হেচড়ে টেনে নিয়ে যাবে স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, মাবাবার সামনে দিয়ে, প্রতিবেশীদের সামনে দিয়ে , কেউ কিছু বলবেনা, জবাই করা হবে অথবা হত্যা করা হবে পিটিয়ে অথবা কপালে গুলি করে লাশ বানিয়ে ফেলে রেখে চলে যাবে। আর প্রতিবেশীরা পালিয়ে যাবে ভয়ে। খুনিদের স্বদর্পে বুক ফুলিয়ে চলে যাবার জন্য খালি করে দেবে পথ। লুকিয়ে যাবে যার যার ঘরে যেয়ে। এটে দেবে দরোজা জানালা। তবু কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেনা।

এমনই এক অন্যায় হয়েছিলো ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ থেকে বাংলাদেশে আনুষ্টানিকভাবে স্বাধিতা ঘোষনা করার পর থেকেই এই অন্যায় শুরু হয়েছিলো যা এখনও চলছে । গনহত্যা। এই গনহত্যা বাংলাদেশেই হয়। এই গনহত্যা সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের মতামত নানাভাবে বিভক্ত। কারনটা কি ? ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গনহত্যা - কেউ কি অস্বিকার করতে পারে ?? পারেনা। তবে অনেকেই নানা রকমের যুক্তি দিয়ে এই গনহত্যার পক্ষে ও বিপক্ষে অনেক ধরনের বিভ্রান্তমূলক কথা বলে যার যার অবস্থানকে বা এই সময়ে যার যার ভুমিকাকে যুক্তিযুক্ত করার চেস্টা করে। গনহত্যার সময় বাংলাদেশে যারা বসবাস করছিলেন তারা ছাড়া আর কারু জানার কথা নয় সেই সময় দেশের কি রকম অবস্থা ছিলো। কোন আজগুবী লিঙ্ক, কোন আজগুবি ইতিহাসের ব্লগ, কোন লীগ বা দল বা নেতা বা নেত্রীর কোন কথা বা বক্তব্য কোন ভাবেই সেই নয় মাসের প্রতিদিনের ভয়াবহ চিত্র মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারবেনা । যারা দেশে থেকে পালিয়ে ভারতে যেয়ে আশ্রয় নিয়েছিলো তারাও অন্য এক ভয়াবহ রুপ দ্যাখে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের। তবে যারা দেশের ভেতরে ছিলোনা তারা দেশের ভেতরে ছিলোনা। যারা ছিলো তাঁদের মধ্যে তিনটি বিশেষ দল ছিলো ---- বাঁচার তাগিদে যুদ্ধ করা --- নিজেকে, নিজের পরিবারকে, নিজের আত্মীয়স্বজন প্রতিবেশী, তারপর দেশকে রক্ষা করার জন্য যারা শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন তারা ছিলেন এক দল।  অনেকে সরাসরি যুদ্ধ করেননি তবে মুক্তিযুদ্ধকে নানাভাবে সাহায্য করেছেন - খাবার দিয়ে, টাকা দিয়ে, আশ্রয় দিয়ে, নিরাপত্তা দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, অনুপ্রেরনা দিয়ে, এরা সবাই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এরা সাধারন মানুষ ছিলেন, রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মী ছিলেন, তারা শ্রমিক ছিলেন, কৃষক ছিলেন, মজুর ছিলেন, কিশোর ছিলেন, মহিলা ছিলেন, বৃদ্ধা মা ছিলেন, তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। সেই সময় শত্রু ছিলো পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আর মুক্তিযোদ্ধা ছিলো সেইসব মানুষ যারা আত্মরক্ষার তাগিদে যুদ্ধ করছিলেন। সেখানে চীন পন্থি মাও বাদী ছিলেন, মসজিদের ইমাম ছিলেন, কমিউনিস্ট বিরোধী সাধারন মানুষ ছিলেন, সেখানে মার্কসবাদী কবি ছিলেন, লেনিনবাদী সাহিত্যিক ছিলেন, সেখানে মার্কস- মাও - লেনিনের নাম জীবনে কোন দিন শুনেননি এমন মানুষ ছিলেন, অনেক মসজিদে অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছিলো, অনেকে রাতে মসজিদে ঘুমাতেন, ভারত থেকে এসে কতজন মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন ? কিসে করে আসতেন ? এক্সপ্রেস ট্রেনে করে এসে মুক্তিযুদ্ধ করে আবার ভারতে নিরাপদে ফিরে যেতেন সুন্দর ফাইভ স্টার হোটেলে ? তেমন সৌভাগ্য আর কতজনের হয়েছিলো ? যদি হতো তাহলে সেইসব মানুষের লাশ পরবর্তীকালে বধ্যভুমি থেকে কি উদ্ধার হতো?

 তখন কোথায় ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান? ১৯৭১ সালের ৯ মাস মুজিব যেখানে ছিলেন সেখানে তিনি  কেনো ছিলেন ? সেদিন কোথায় ছিলেন অধ্যাপক গোলাম আজম ? সেদিন কোথায় ছিলেন নিজামী , সাজেদা, হাসিনা ? শেখ কামাল ? শেখের দুঃস্থ পরিবারের লোকজন ? তারা সবাই নিরাপদে ছিলেন বলেই  তাদের দেহ বধ্যভুমিগুলো থেকে কুকুর শেয়ালে টেনে টেনে বের করেনি।  কোন পূন্য করার ফলে ? তারা কেউ মুক্তিযুদ্ধ না করেই কিভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান হয়  ? শেখ মুজিব নিজে পাকিস্তানের সমর্থক ছিলো যা আরও ভালভাবে পস্ট হয় ১৯৭৩ সালে যখন সাধারন ক্ষমা ঘোষনা করা হয় আর ১৯৭৪ সালে যখন মুজিব ইসলামাবাদে যায় যেয়ে সেই একই পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর গার্ড অফ অনার নেন। ভুট্টো ক্ষমতায় আসাতে কি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বদল হয়ে গেছিলো ??? হয়নি। সেই একই আর্মী মুজিবকে গার্ড অফ অনার দেয় । মুজিব দাঁড়িয়ে ছিলো ভুট্টোর পাশে ১৯৭৪ সালে। আর এই দৃশ্য কিভাবে বাংলাদেশের মানুষেরা সহ্য করলো ? বাংলাদেশের এখান ওখান থেকে ১৯৭৪ সালে তখনো লাশগুলোকে শেয়ালেরা টেনে টেনে বের করতো । এ্যাত দ্রুত মুজিব আর ভুট্টোর বন্ধুত্ব কিভাবে জোড় লেগে গেলো? নাকি বন্ধন সবসময়ই অটুট ছিলো ? নীজামী আর গোলাম আজম আর মুজিবুর রহমনার পার্থক্য কি ছিলো ? কে যুদ্ধাপরাধী আর কে যুদ্ধাপরাধি নয় ?? কে কে মুক্তিযোদ্ধা ছিলো ??? শেখ মুজিব তো নিজেই মুক্তিযোদ্ধা ছিলোনা

অনেক অনেক অনেক মানুষ যুক্তি দেখিয়েছে যে বাংলাদেশের স্বাধিনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। স্বপ্ন তো স্বপ্নই। স্বপ্ন যে দেখেছিলেন সেইটা কে কে দেখেছিলো আর কিভাবে দেখেছিলো ? পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ব শাসনের স্বপ্ন গোলাম আজম বা নিজামী দ্যাখে নাই। তার কারন নিজাবী বা গোলাম আজম তখন মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের তৈরী ও সমর্থিত পাকিস্তানের সমর্থক ছিলো। মুজিব কাকে সমর্থন করছিলো সেদিন ?? সেই নয় মাসে মুজিবকে কে বাঁচিয়ে রেখেছিলো পাকিস্তানে ? কারা ? সেই স্বাধিনতার স্বপ্ন যদি বাঁচিয়ে না রাখতো , যদি মুজিবকে হত্যা করা হতো,  স্বাধীনতার স্বপ্নও তাহলে সেই সাথেই পটল তুলতো । যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশে মুজিবকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিলো বিনিময়ে  ১৯৭৩ সালে স্বাধিনতা বিরোধীদের মুজিব ক্ষমা করে  দেয়।  ১৯৭৪ সালে হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে গার্ড অফ অনার নিতে ইসলামাবাদ ও লাহোরে যায়। "যুদ্ধাপরাধী" এই শব্দটি ১৯৭২-৭৫ সালে আমরা কেনো শুনিনি ?

আমি তো এখন কালা। কালা হলেও অন্ধ তো ছিলাম না। পত্রিকা পড়তাম নিয়মিত। বকৃতা শুনতাম নিয়মিত। রাজনীতি করতাম নিয়মিত। কেনো শুনলামনা এই "যুদ্ধাপরাধী" শব্দটি ? কেনো দেখলাম না বিচার ? কেনো দেখলাম শত্রুরা বাংলাদেশের মাঠে আসছে ক্রিকেট খেলছে। শত্রুর পাকিস্তান এয়ারলাইন্সের প্লেন বাংলাদেশের আকাশে উড়ছে। বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানীরা বানিজ্য করছে। বাংলাদেশে অবস্থিত বিহারী যারা ১৯৭১ সালের নয় মাস হানাদার বাহিনীকে সাহায্য করেছিলো তাদেরকে পাকিস্তান নিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা কিভাবে কাফিরদের দেশে বেঁচে থাকতে পারলো কাফিরদের জন্য আসা বিদেশী সাহায্য খেয়ে ?

 আর কাফিররা স্বাধিন বাংলাদেশে না খেয়ে মরতে শুরু করলো ? সেটা সম্ভব হয়েছে অন্যায়ের ভীতে জীবনকে সমর্পন করে।  কার জন্য এই অসম্ভব সম্ভব হলো ? ... নিজামী, গোলাম আজম আর মুজিব ------এদের মধ্যে কোথায় কিভাবে আমি পার্থক্য টানবো ? যারা জামাত করেন তারা শুনলে ক্ষুব্ধ হবেন এই ভেবে যে এ্যাত বড় সাহস মুজিবের সাথে আমাদের প্রিয় আমীরের তুলনা ? যারা আওয়ামীলীগ করেন তারা ক্ষুব্ধ হবেন -- এ্যাত বড় সাহস ...জাতীর পিতার সাথে গোলাম আজমের তুলনা...।।সেই তুলনা তো করা যাচ্ছেনা। সমস্যা সেখানেই । .........।।কোন উপায় নেই। মাঝে মাঝে মনে হয় ওরা একই বৃন্তের তিনটি ফুল ।-----------সাধারন ক্ষমা ঘোষনা ----- ছিলো শেখ মুজিবের " অন্যায় " -------- বাংলাদেশের কোন মানুষ টু শব্দ করেনি এর বিরুদ্ধেএটা ছিলো অন্যায় । কার বিরুদ্ধে ? অন্যায় করা হয়েছে সেই সব মানুষের উপরে যারা প্রিয়জন হারিয়েছে। অন্যায় করা হয়েছে সেই সব লাশের  বিরুদ্ধে যেইসব লাশগুলো জীবিত হয়ে উঠে এসে প্রতিবাদ করতে পারেনি। শেখ মুজিবের কি অধিকার ছিলো "সাধারন ক্ষমা" করার ? কোন অধিকার ছিলোনা। ...৩০ শে নভেম্বর, ১৯৭৩ সালে মুজিবের সাধারন ক্ষমা ঘোষনা এইভাবে "অন্যায়" এর হাতে হাত রেখে বাংলাদেশে তার যাত্রা শুরু করে । কেনো যেনো আমার মনে হতো সবাই শেখ মুজিবের প্রেমে আপ্লুত আর এই প্রেমের কারন ছিলো "অপরাধ" করতে পারার ব্ল্যাঙ্ক চেকে শেখ মুজিবের স্বাক্ষর । তাই তার সব "অন্যায়" কে ক্ষমা সুন্দর চোখে দেখা হয়েছে যেহেতু যারা অন্যায় এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হবেনা তারাও অন্যায় করার লাইসেন্স পেয়েছেন নিজেদের আখের গুছিয়েছেন। যে স্বাধিন দেশের জন্মই হয়নি সেই অজন্মা জাতীর পিতা হলে তো এমন হতেই পারে। এইভাবে শেখ মুজিবের অন্যায়ের হাত ধরে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছে। এইভাবেই চলেছে বাংলাদেশ --- সেই যেখানে  চলেছে বাংলাদেশ     ১৬ই জুন, ১৯৭৫ সালে মুজিব সংবাদপত্রের ডিক্লারেশন বাতিল করে দেয় । বাংলাদেশে মোট চারটি পত্রিকার ডিক্লারেশন বহাল রাখা হয়। ছবিতে দেখা যাচ্ছে সেই চারটি পত্রিকার নাম। আর সব মানুষের কথা না হয় বাদ দিলাম। মুজিবের সুনাম সাংবাদিকদের মুখে শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা। তার কারনটা কি ? ১৬ই জুন, ১৯৭৫ সালে মুজিব সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়। এই ছবিতে তা দেখা যাচ্ছে। এই দিনে, শুধু মাত্র চারটি পত্রিকার ডিক্লারেশন বহাল থাকে। আর এই চারটি পত্রিকা হলো ঃ দৈনিক ইত্তেফাক, বাংলাদেশ অবজারভার, দৈনিক বাংলা ও বাংলাদেশ টাইমস। আর এইসব পত্রিকার সাংবাদিকরা তো মুজিবের এই বদান্যতার কারনে আর টাকা পাবার কারনে ল্যাজ নাড়তে নাড়তে মুজিবের গুনগান গাইবেই। তখন গনকন্ঠ অফিসে যেভাবে তছনছ করে কবি আল মাহমুদ আর অন্যান্য বামপন্থি কবি, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদদের ধর, পাকড়, নির্যাতন, হত্যা ইত্যাদি করা হচ্ছিলো তাতে স্বাভাবিকভাবেই এই চারটি পত্রিকাকে মুজিবের আইনের শেকল নাকে বেঁধে প্রকাশ করতে দেবার অনুমতি ছিলো এইসব পত্রিকার সাংবাদিকদের জন্য একটি দাঁত বেড় করে চিত হয়ে শুয়ে আকাশের দিকে দুই হাত জোড় করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মতো অবস্থা ।
এই লাশ ১৯৭৪ সালের এক ক্ষুধার্ত মানুষের লাশ এই লাশ দাফন করার জন্য আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম পথ থেকে ট্রাকে তুলেছে। এই ছবি তোলেন জন পিলজার। এই লাশ মুজিবের বাংলার ক্ষুধার্ত মানুষের লাশ। এই বাংলার মানুষ সেই বাংলার মানুষ যাদের ভাত, কাপড়, বাসস্থান ও স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক অধিকার দিতে মুজিব ব্যর্থ হয়। সেই সময় মুজিব নিজের আর ভারতের পুঁজিবাদের ভাত, কাপড়, বাসস্থান ও স্বাস্থ্যের বাজার প্রতিষ্টাতে ব্যস্ত থাকার ফলে মুজিবের বাংলার মানুষের দিকে তাকাবার সময় ছিলোনা। তবে কোটি কোটি ডলারের বিদেশ সাহায্য যা এইসব বাংলার মানুষের নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করে তা ছালার বস্তা করে মুজিবের লোক জনে যার যার ঘরে নিয়ে যায়। ফলে বাংলার মানুষ না খেয়ে পথে পথে মরে পড়ে থাকে। এখন আসি অন্যায় প্রসংগে। এইখানে "অন্যায়" কিভাবে হলো?"অন্যায়" এইভাবে হলো যেহেতু সাংবাদিকদের কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিলো ভীতি প্রদর্শন করে । যেহেতু কিছু সাংবাদিকদের মোসাহেবী করার জন্য নাকে টাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছিলো যেহেতু কিছু লেখক, চিত্রকার, গায়কদের হাতে টাকা গুজে দেওয়া হয়েছিলো তাই তারা মুজিবের গুনগান করতো পথে পড়ে থাকা লাশগুলোকে উপেক্ষা করে। আর এইভাবে "অন্যায়" যে শুধু মুজিব করেছিলো তা নয়। অন্যায় করেছিলো সেইদিন সেইসব বুদ্ধিজীবি, ইতিহাসবিদ যারা এইসব "অন্যায়" কে ধামা চাঁপা দিয়ে রেখেছিলো নিজেদের বিবেককে হত্যা করে। এইভাবে "অন্যায়ের" হাত ধরে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিলো। তাই কোথায় চলেছে বাংলাদেশ - এই প্রশ্নের উত্তর আছে সেই সব অন্যায়ের মধ্যে যেইসব অন্যায়ের হাত ধরে আজ বাংলাদেশের বয়স হয়েছে ৪১ বছর।

No comments:

Post a Comment