Tuesday, April 26, 2016

নীল নীল বিষ

অর্ধেক সাধু অর্ধেক শয়তান
অর্ধেক সুখ অর্ধেক দু:খ
মাঝখানে বিভ্রান্তির দিন আর রাত
মাঝ সমুদ্রে নীল নীল বিষ
তীরে পৌছুতে দেরি ঢের
অর্ধেক দেহ অবশ
অর্ধেক মন বিবশ
অর্ধ ভক্ষিত পৃথিবী
বাকী অর্ধেক ভিক্ষা চায়
হায়েনারা মুখে নিয়ে হাসে
রক্তাক্ত পৃথিবীর বাকীটুকু

বিকল বিকল্প

তার আসার সময় হলো
এখনই পর্দা উঠবে মঞ্চের
সবার চোখে অপেক্ষা
সে এলোনা
সে আসবেনা
সবাই হতাশ, স্তব্ধ, ক্ষুব্ধ
এমন কি আছে তার মাঝে?
সে না এলে কি হবে?
কার কি এসে যায়
সবার বিকল্প থাকে
সব কিছুর বিকল্প থাকে
কেউ কারু জন্য ক্ষুব্ধ নয়
আশাভঙ্গের জন্য ব্যথিত সবাই
আশা থাকে বুকে
মঞ্চে নয়

হৃদয় বাদে সব ছিল

এবরোখেবড়ো রাস্তা
না পাহাড় না সমতল
না খাদ না অখাদ
আলুথালু হাওয়া
না ঠান্ডা না গরম
বনবাদারে ভরা চারিদিক
অথচ পাতাল থেকে অনেক দূরে বসবাস
শিকর জড়িয়েছে কঙ্ক্রিটের দেওয়ালে
ইট সিমেন্ট ধরে রাখে জড়িয়ে
শাখাপ্রশাখা
সবুজ পাতা জন্মে
নির্বিঘ্নে
সামনে সবুজ গালিচা
পেছনে ইট বালি সিমেন্টের দেওয়াল
ভাল মানুষের মুখোশে
হৃদয়হীন কসাই
না আলো না আঁধার
না বৃষ্টি না খড়া
এমন এক অনিশ্চিত সময়
পেড়িয়ে যাবার উপায় নেই
পরিশোধ করতে হবে সব ঋন
পালাবার পথ নেই

আকাঙ্ক্ষা

গতানুগতি ছকে বাঁধা ঘর
থালা বাসন
বিছানা বালিশ
বের হয়ে আসতে চাই আমি
একই আসবাব
মাখার খুলির ভেতরে আটকে আছে
বের হয়ে যেতে চাই আমি
সেই একই অভিযোগ
নুন হয়নি মাছে
তেল হয়নি ডিমে
টাকা নাই হাতে
বের হয়ে আসতে চাই আমি
হাহাকার থেকে
টাকা ছাড়াও হাসা যায়
টাকা ছাড়াও মরা যায়
বদলে ফেলতে চাই ছক
প্রতি ছয় মাসে একবার
দম বন্ধ হয়ে আসে আমার
বের হয়ে যেতে চাই
এখান থেকে অনেক দূরে
বাঁধা বন্ধন রুটিন থেকে

আনমনে

অনেকটা পথ এসে
থমকে দাঁড়িয়েছিল সে
কি যেন ফেলে এসেছে
পেছনে
কি ছিল সেটা?
এক টুকরো স্বপ্ন?
একগাদা স্মৃতি?
এক ছটাক হৃদয়?
কি এমন পিছুটান
চলতে চলতে
ঝলকে ঝলকে
ছেড়ে গেছে স্বপ্ন
মুছে গেছে স্মৃতি
ছিড়ে গেছে হৃদয়
ফিরেই বা যাবে কোথায়?
কার কাছে?
যার যার ভাগ সে সে নিয়ে গেছে
চেছেচুছে হৃদয় শুষে
কেউ কি রেখেছে কিছু বাকী?
ফিরে সে যাবে কোথায়?
কার কাছে?

মুঠোতে খুশী

শুধু এক মুঠো খুশী তুলে নেবো
তোমার চলে যাবার পথ থেকে
আর কিছু না
শুধু তোমাকে দেখবো 
সেইটুকু 
যেখানে অপেক্ষা ছিল
শুধু আমার জন্য
তারপর
বন্ধ করে দেবো ডায়েরি লেখা
আর কিছু না
এক ফালি চাঁদ দেখা চোখে
আমার প্রতিবিম্ব দেখবো
আর কিছু না
এইভাবে পেড়িয়ে যাবো ধু ধু মাঠ
আর কিছু না

নিশ্চিন্তে ভাসে যুবকের লাশ

আজলা ভরা জল
ফ্যাকাসে আঙ্গুল
যুবকের লাশ
পচা গলা ভাসমান
যুবকের লাশ
নিশ্চিন্তে ভাসে
পেছনে ফেলে রেখে
অপেক্ষা
দুঃশ্চিন্তা
রাত্রি জাগরণ
ক্ষুধা
কান্না
অভিমান
প্রেম
নিশ্চিন্তে ভাসে
ফ্যাকাসে আঙ্গুল
যুবকের লাশ
জীবনের সাথে
এসেছে ফেলে
পেছনে
মৃদু বাতাসে দোলে
মাছেরা দেখে যায় এসে
জলপিপি, কোলা ব্যঙ্গ
হেটে যায়, লাফাই, ফরিঙ্গে
উড়ে এসে বসে
নিশ্চিন্তে ভাসে
যুবকের লাশ

আকাশের অনেক কাজ

আকাশের অনেক কাজ
মেঘেদের প্রতিবাদ মিছিল
লেগেই আছে দিনরাত
তার উপর আছে বাড়তি ঝামেলা
কয়লা পুড়ছে দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা
স্বচ্ছ মেঘে মিশছে এসিড
মেঘেদের আপত্তিটা সেখানেই
বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছে
বিশ্বব্রহ্মাণ্ড
কৃষকেরা ফলাবে ফসল
সবুজে সবুজে ঢুবে যাবে মরুভূমি
স্বচ্ছ মেঘে মিশছে এসিড
সেই বৃস্টিতে মরে যাবে ফসল, গাছ, লতাপাতা
মরে যাবে ব্যাঙ, মানুষ, সাপ, কুকুর
এমন কি ধু ধূ মরুভূমির রক্তচোষা
মরুমাকড়
আকাশের অনেক কাজ
মেঘেরা বিক্ষুব্ধ
এসিড এসে মিশছে
বিষাক্ত করে দিচ্ছে মেঘেদের মন

মেঘ

আমি সূর্যকে ভয় করি
আলোতে স্পষ্ট দেখা যায়
অদ্যবধি যা কিছু ঘটে গেছে
এই হাটে
ভাঙ্গা হাড়ি, চুরমার কাঁচ
হতাশা, ক্রোধ, অমীমাংসিত বোধ
উচ্ছিষ্টের মত ছুড়ে ফেলে দেওয়া মন
কালাবাজারে বিক্রি হয়
মান সন্মান আপনজন 

আমি সূর্যকে ভয় করি
আঁধারের অপেক্ষা করি
চাঁদের মিষ্টি আলোতে
গল্প বলতে পারি
যা কিছু জ্বলে গেছে
সূর্যের আগুনে

আঁধারের অপেক্ষা করি

আলোতে হারিয়ে যাবার বড্ড ভয়
আঁধারে নিজেকে খুঁজে পাই

অবসাদ

এক --
এখানে হাত রাখো
খুলে ফেলো নীল খাম
উপচে পড়া
অফুরন্ত জীবন
আলো জ্বালো ম্লান চোখে
প্রসারিত করো হাত
মুঠোভড়ে তুলে নাও
অফুরন্ত জীবন
আলোর মতই
আধারের প্রয়োজন
শীতল রাখতে
অফুরন্ত জীবন


দুই --

আবার তুমি হারিয়ে গেলে
রাত্রির নিস্তব্ধতার মত
সকালের অস্থিরতার মত
দুপুরের অনিশ্চয়তার মত
বিকেলের ক্লান্তির মত
সূর্যাস্তের প্রতিজ্ঞার মত
আবার তুমি হারিয়ে গেলে

তিন --


খাঁচাতে আটকে রাখা বাঘের মত

দেহ আর মন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে
আমি আর লড়াই করতে পারিনা
ক্যালসিয়াম জমে কানের ভেতর
মগজের সাথে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে
দেহ আর মন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে
এখানে ওখানে
আমি আর লড়াই করতে পারিনা
এখানে আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
দেহের সাথে মনের
চলছে অসহযোগ আন্দোলন
বহির্বিশ্বের সাথে
আমি আর
লড়াই করতে পারিনা


চার

ঢাকতে যেয়ে 
শাক দিয়ে মাছ
মাছ হেসে
বদলে দিলো নাম
গলাগলি থাকে 
তবু রয়ে গেলো
ভিন্ন চেহারা ভিন্ন স্বাদ
যার যার জাগাতে
সে সে শক্তিমান
মনের ভেতরে
ঘুটঘুটে অন্ধকার
দিন এলো তবু
আলো জ্বেলে সূর্যটাকে
দেখে নিতে হলো

রাত আর দিনের মাঝামাঝি

এমন এমন রাত আসে
অর্ধেক কাটে
অর্ধেক থাকে অসমাপ্ত
আধোমুখে বসে থাকে
আলো আঁধারে
সিদ্ধান্তহীন
স্বপ্নহীন
ভুল আর ঠিকের কাঠগড়াতে
গড়িয়ে চলে সময়
এমন এমন রাত আসে
অর্ধেক কেটে যায় কত সহজে
আর অর্ধেক কাটতে লেগে যায়
জীবনের অর্ধেক ক্লেশ
এমন এমন রাত আসে
স্বপ্নেরা পালিয়ে যায়
এমন এমন রাত আসে
আনমনা হয় চাঁদ, মেঘেরা ফিকে হয়
আকাশ ভরা তাঁরা হঠাৎ উধাও হয়ে যায়
এমন এমন রাত আসে

অবরোধ

আজ আমার 
যাবার পালা
পথঘাট শূন্য করে
আকাশের ছায়া থেকে সরে 
সুশীতল মাটির গভীর মমতায়
দেহ থেকে হৃদয়
বিদায় দিয়ে
আজ আমার যাবার পালা
শুধু প্রানের উল্লাস নেবো সাথে
দেহ যাবে খসে ধীরে ধীরে
মিশে যাবে কঙ্কাল
ফসিল হবে
তারপর পাথর থেকে কয়লা
আজ আমার যাবার পালা
বৃষ্টিকে বিদায় দিয়ে
ছোট্র লতা
বুনো ফুল
সব ভুল আর দ্বন্দ্ব থেকে দূরে
আজ আমার যাবার পালা
দেহ থেকে হৃদয়
বিদায় দিয়ে

হীম শীতল মৃত্যুর চড়কিতে ঘুর্নীয়মান

এই মহুর্তে আমার মাথার ভেতরে এক
গভীর গর্ত
আর সেই মৃত্যুকুপের ভেতরে
মটরবাইকের স্টান্টম্যান
ঘুরছে অনবরত
শুধু অপেক্ষা
কখন এক লাফে
পেড়িয়ে যেয়ে সব বাধা
বেড়িয়ে আসবে
অন্তহীন অন্ধকার থেকে
উজ্জ্বল আলোতে
উত্তেজনয়ায় চীন চীন করে
পাজড়ের চামড়া
সুযোগ ফসকে গেলে
কনক্রিটে থেঁতো হলে
মাথা ফেটে চৌচির
তবু সে আসবে বেরিয়ে
ক্রমশ এগুতে থাকবে
গভীর অন্ধকারে
ছেলেবেলাতে মৃত্যুর কাছে
গেছিলাম আমি
কৈশরে আরও একবার
আর একবার মধ্যবয়সে
হীম শীতল মৃত্যুর চড়কিতে
ঘুর্নীয়মান
মাথার ভেতরের গর্তের চারিপাশে
আমার স্বপ্ন
আমার শিশুদের মুখ
ঘুর্নীয়মান
গভীর কালো দীঘল চোখের
উদাস ছায়ায় ডুব দিয়ে
হারিয়ে যেতে আবার এসেছি
এক লাফে
বেরিয়ে এসেছি
উজ্জ্বল নক্ষত্রভরা আকাশের নীচে

বিলাস

এক --

এসো দু:খ দু:খ খেলি

দু:খের আদি থেকে অন্ত 
কার কার কাছে
কত শত দু:খ আছে
সব ঢিবি করে রাখো
দু:খের পাহাড়ে চড়ে
নদী দেখবো
পৃথক করবো
পানি
পাতালের
বৃষ্টির
অশ্রুর
মিশতে দেবোনা
এক দু:খের সাথে অন্য দু:খ
সবার সব দু:খ
আলাদা আলাদা
শত শত ভাগে বিভাজিত
সেখানেই খেলার মজা
সবাই মিলিয়ে গুলিয়ে খিচুড়ি পাকাতে চায়
অথচ সব আলাদা আলাদা
দু:খেরা অকৃত্রিম

দুই --

এখানে আমার কিছু নেই
ওখানেও কিছু নেই
বুঝিনা আমি আসলে কোথায় থাকি 
কি করি
এক এক দিন এক এক রঙ্গের
আকাশের মত
এক নীলের কত রকমফের
জানো আমি রং কানা
কালোকে সাদা মনে করি
আর
লালকে সবুজ
একদিন আমি সব লাল মেখে
মিশে যাবো রক্তে তোমার
বলবো
আমি তো রং কানা
তাই বুঝিনি
লালকে ভেবেছি সবুজ
তোমার মনে তাই ঠাই খুঁজতে যেয়ে
মিশে গেছি

স্থবির

রেখে দিও যত্ন করে
সময় হলে খুলে দেখো
ভাজে ভাজে সাজানো 
অপেক্ষা 
আকাঙ্ক্ষা 
মৃত মথ
কুৎসিত কদাকার
প্রজাপতি হতে না পেরে
বন্দি হয়ে ছিল
ভাজে ভাজে সাজানো
অপেক্ষা
উড়ে যাবার
আলো দেখার
ফুলের সুগন্ধি মেখে
উৎসবে যোগ দেবার
অপেক্ষা
ম্লান আর বিবর্ণ এখন
ভাজে ভাজে
খেরোখাতা
ছেড়া পাতা
তবু রেখে দিও যত্ন করে
এছাড়া কিছু নেই
ভাজে ভাজে সাজানো
অপেক্ষা
আকাঙ্ক্ষা
সব কিছু মৃত
স্থবির

পরকীয়া

এই তো এখানে আছে
বালিশের নীচে
আমার মনের কথাটি লুকানো
আমার স্ত্রী জানেনা এসব কিছু
ভাল স্বামী আমি
খেতে দিচ্ছি, থাকার জাগা করে দিয়েছি
আরাম, আহ্ললাদ সব আছে
আমার স্বাধিনতা বালিশের নীচে
সেখানে কারু প্রবেশ নিষেধ
এই তো এখানে আছে
তোষকের নীচে
লজ্বা - নারীর ভুষোন
খসলে দোষ আছে
খসালে তা পুরুষের অধিকার
এই তো বউ, বেশ্যা আর প্রেমিকার
মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য
ফেক্সিবল, ফিক্সড এন্ড অকেশনাল রেট
এই তো নারী ভোগ্যপন্য
যারা অন্যের
আমারটিকে রেখেছি যতনে
কালো মোড়কে ঢেকে
শুধু একা খাবো বলে
সবার নজর বাঁচিয়ে
এই তো নীল নকশা
এইখানে
আমার চামড়ার নীচে

ক্যাকটাস

এক ---

যে মার খায়

আর
যে মারে
আসলে ওরা দুজনেই মরে
একই মৃত্যু
কত যুগ ধরে
বাচার আকুতি দেখে চোখে
সে প্রতিদিন মরে
সে প্রতিদিন বাচে
আবার মারবে বলে
নিজেকে ইশ্বর ভাবে
জীবন থেকে মৃত্যুতে পৌঁছুতে যেয়ে

দুই ---

তুমি কি জানতে?
তখন ছিল আমার যাবার সময়
পারিনি যেতে
বুনো কাটা লতা বেধেছিল পা'য়ে
তুমি কি জানতে?
অক্টোপাসের মত চেপে ধরে
শুষেছে রক্ত নি:শব্দে
তুমি কি জানতে?

বাতাসের ভাজে ভাজে
লুকিয়ে ছিল
ফিসফিস কান্নার শব্দ
তুমি কি জানতে?

তিন --

রুপোর আধুলির মত 
চকচকে চাঁদ
কুতসিত কদাকার
পাথরের টুকরো
অন্যের আলোতে ঝলকায়
উঁচু উঁচু দালানের মাঝখানে
নির্লজ্ব!

চার --

ধীরেধীরে বন্ধ হলো কপাট
নিঝুম হলো রাত
বেদনারা বিছার মত একেবেকে
জড়িয়ে নিলো মন
সামনে পরাজয়
পেছনে দেওয়াল
চারিদিকে নিকষ কালো আধার
লাশেরা অপেক্ষা করে
সারিবদ্ধ
আত্মারা চলে যায় যার যার গন্তব্যে
এখানে সব কাজ শেষ
দেহ গলে, পচে, মাটিতে মেশে
পরিবর্তিত হতে থাকে হাজার বছর ধরে

পাঁচ --

ছায়া হয়ে থাকবো শুধু
মুছে দেবো পদচিহ্ন 
কেউ জানবেনা
থাকবো সারাক্ষণ
ছায়া হয়ে
রোদ হয়ে, বৃষ্টি হয়ে, শরতের মেঘ হয়ে
অদৃশ্য, অফুরন্ত, শব্দে সাজাবো দেবদারু পাতা
চোখ খুললেই ধুয়ে যাবে শব্দেরা
ভেসে যাবে কাগজের নৌকা
ডূবে যাবে মন
ভৈরবী সুরে
রেশ থেকে যাবে আমার আসার
শুধু তুমি জানবে
আর কেউ জানবেনা
আমি এসেছিলাম
শুধু তুমি দেখবে
কলকে পেড়ে শাড়ির আঁচলের
ধুলো দেখে দেখে
খুজে নেবে পথ
আমার আসার

ছয় --

কি করি বলোতো
ভেবে ভেবে কিছু বলতে গেলে
বেশি বলা হয়ে যায়
না ভেবে কিছু বললেই
সত্যগুলো সব বলা হয়ে যায়
কি করি বলোতো
শুধু যা বলতে চাই
তা আর বলা হয়না
এই যেমন ধরো
কিছুদিন আগে পাতাঝরার দিন এলো
আমি ভাবলাম তুমি যদি থাকতে
বলতাম – এভাবে পাতার উপর দিয়ে হেটোনা
ওরা ব্যাথা পাবে
তুমি বলতে – ওরা তো মরে গেছে
আমি বলতাম – কোন কিন্তু মরেনা কোন দিন
শুধু রুপ বদল করে

সাত ---

আজ সকালবেলাতে সাঝ
আজ তুষার বৃষ্টি অনাসৃষ্টি
আজ লুকিয়ে গেছে সূর্যি
আজ কেউ নেই কোথাও
অপরিবর্তিত মহাশূন্য


ওরা নেই

তুমি না বললেও
আমি জানি
ওরা আর নেই
আমি দেখি ভাবনাহীন
নির্লিপ্ত চোখ
সেখানে আবর্জনা শুধু
চারিদিকে নর্দমা
লাশ আর পিশাচ
দ্বিপদ জানোয়ার
সবার পেটে শুধু ক্ষুধা
বুকে ক্ষুধা
চোখে ক্ষুধা
যৌনাংগে ক্ষুধা
যাকে পায় তাকে খেয়ে ফ্যালে
উদর ভরে আবার খালি হয়ে যায়
নিমেষে
আমার শিকারে বেরোয়
যাকে পায় তাকে খায়
তুমি না বললেও
আমি জানি ওরা নেই
কেউ পুরে ফেলেছে উদরে
ওরা নেই

কাল ভোরে

কাল ভোরে - ১

কাল ভোরে

খুব ভোরে
সূর্য ওঠার আগে
খুব আগে
আমাকে জাগিয়ে দিও
হিমালয়ের চূড়াতে শিশির ছুব
মাঝখানে গৌতম নেই
গৌতমেরা এখন ডাকাতি করে ব্যাংকে
গৌতমেরা এখন ধর্ষন করে গলা কেটে ফ্যালে মেয়েদের
কাল ভোরে
খুঁজতে যাবো ঘর
গৌতম চেয়েছিল ছাই
সেই ঘর থেকে
যে ঘরে একজন দেশপ্রেমিক বাস করে

কাল ভোরে - ২
এই বৃষ্টির অপেক্ষায় ছিলাম 
ভিজিয়ে দেবে মাটি, মাঠ, মন
বৃষ্টির অপেক্ষায় ছিলাম
ধুয়ে দেবে গ্লানি, গতকাল
অপেক্ষায় ছিলাম
উত্তাপ রেখে হৃদয়ে
ভিজে যাবো
যা লেখা আছে তার চোখে
বুঝে নেবো
আমি এই বৃষ্টির অপেক্ষায় ছিলাম

কাল ভোরে - ৩

কাল আর আজ
পার্থক্য শত যুগের
আজ আমি ফিরে গেছি
শত যুগ আগে
সেই কূয়ার পাশে
যে কূয়াতে ফেলা হতো
জীবন্ত শিশু
গ্রামবাসীর জীবন বাঁচাতে



অপেক্ষা

খড়কুটো যোগার করে আমি তৈরি
শীত এলে লুকিয়ে যাবো
গোপন গর্তে
সে পথ অচেনা অজানা
কারু নেই আনাগোনা 
ঘুম ঘুম পাহাড় আছে
চাপাফুল আর ঝোপঝাড়
কিছু বাদুর আছে উলটে
পুরানা ইমারতের নীচে
কাঠের কুঠরীর ভেতর
কিছু শেয়াল আছে
কিছু দূরে
আর আছে লক্ষীপেচা
খুব একা
খুব প্রাচীন
এক গাছে বসে থাকে
চোখ খুলে আজীবন
খড়কুটো ফুরিয়ে গেলে
বের হয়ে আসবো আমি
গ্রীস্মে

আড়ালে

আমার সুখগুলো খুব দামী
তাই যত্ন করে সিন্দুকে তুলে রাখি
আমার দু:খগুলো আটপৌরে
তাই সর্বক্ষন বুকে ধরে রাখি
প্রান খুলে রাখি
পাছে তুমি দেখতে না পেয়ে
ফিরে যাও
তবু তুমি আসোনি এদিকে
কার যেন সুখের পাহাড়ে
আড়াল করা ছিল পথ

ভাসমান

মাধ্যাকর্ষণ শক্তিতে ভেসে আছি
খড়কুটো থেকে 
বক হতে পারি
মাছ হতে পারি
সূর্য হতে পারিনা কেনো?
অশ্রু থেকে মেঘ হতে পারে
মেঘ থেকে বৃষ্টি হতে পারে
বনভূমি হতে পারেনা কেনো?
চলতে থাকি অবিরাম
চলার পথে বাধাগুলো
ভেংগে দিতে পারিনা কেনো?
ভেসে যায়
ছিড়ে যায়
খড়কুটো হয়ে রয়ে যায়
এ থাকাকে না থাকার মত
ভাবিনা কেনো?

নিখোঁজ আততায়ী

সবগুলো পাথর সরিয়ে
দেখা হয়ে গেছে
কোথাও লুকিয়ে নেই আততায়ী
তাহলে সে কোথায়?
এই প্রশ্ন কন্ঠ থেকে ইথারে ইথারে
ভেসে বেড়ায় মহাশূন্যে
সে আছে খাদ্যে
সে আছে বাতাসে
সে আছে পানিতে
সে আছে সড়কে
বুলেটে, ক্ষমতালোভী হায়েনার মগজে
সে আছে সবখানে
সবার নাকের ডগায়
সবার চোখের সামনে

সাদৃশ্য

ইঁদুরের জীবন চক্রের চাইতেও করূন
মানুষের জীবন চক্র
এতগুলো ধামার নিচে থেকে কেমন করে বাঁচতে পারে জীবন?
নাকি জীবন ভেবে যা কিছু দেখা যায়
সেইসব কিছুই দেহ শুধু
 – অনেক কাল আগেই জীবনের মৃত্যু ঘটেছে।
 দেহ হেটে বেড়ায়, দৌড়াই, বাণিজ্য করে,
 লাভ ক্ষতির হিসাব কষে,
হানাহানি কাটাকাটি করে,
কিছু পাবার জন্য কৌশল অবলম্বন করে,
 পাওয়া হয়ে গেলে আঘাত করে, ছুটে চলে – শুধু দেহ।
জীবন মরে গেছে সেই কতকাল আগে।
 ধামার নিচে থাকতে থাকতে
মরে গেছে শ্বাসরোধ হয়ে